দেশ বাংলা ডেস্ক
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্নাকে (৩৮) ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার তিন আসামির আটদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জেলা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুর রহিম তাদের এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন- জগন্নাথপুরের অভি মেডিকেল হল ফার্মেসির মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপ, দোকানি অনজিৎ গোপ ও অরূপ ফার্মেসির মালিক অসিত গোপ।
এর আগে তিন আসামিকে আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডির) পরিদর্শক লিটন দেওয়ান। রিমান্ড শুনানি শেষে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রত্যেক আসামির আটদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন বিচারক।বিষয়টি নিশ্চিত করেন পুলিশের সুনামগঞ্জ আদালত পরিদর্শক মো. বদরুল আলম তালুকদার।
প্রসঙ্গত
জগন্নাথপুর বাজারের ব্যারিস্টার আব্দুল মতিন মার্কেটের অভি ফার্মেসির ভেতর থেকে জাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্না ছয় টুকরো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেপ্তারের পর হত্যাকাণ্ডের রহস্য জানাল ( সিআইডি)।
এ ঘটনায় শুক্রবার গ্রেপ্তার করা হয় ফার্মেসির মালিক জিতেশ চন্দ্র গোপ অভিকে , তার দেয়া তত্ত্বের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় তার বন্ধু অনজিৎ চন্দ্র গোপ ও অসীত চন্দ্র গোপকে।
শনিবার দুপুরে সিআইডির সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ দেন সিআইডির এলআইসি শাখার বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তাধর।
গত (১৭ ফেব্রুয়ারি) সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর বাজারে ব্যারিস্টার আবদুল মতিন মার্কেটের অভি মেডিকেল হল নামে একটি ওষুধের দোকানের শাটারের তালা ভেঙ্গে শাহনাজ পারভীন জোৎস্নার ছয় টুকরো লাশ উদ্ধার করে জগন্নাথপুর থানা পুলিশ। জোৎস্না জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের নারকেলতলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী সুরুক মিয়ার স্ত্রী ও তিন সন্তানের জননী। দীর্ঘদিন ধরে জগন্নাথপুর পৌরসভার পিছনে নিজস্ব বাসায় ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন জাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্না।
এ ঘটনায় ওইদিনই নিহতের ভাই হেলাল মিয়া বাদী হয়ে জগন্নাথপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর-০৮/১৫।
সিআইডি জানায়, শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্না ২০১৩ সাল থেকে জগন্নাথপুর পৌর শহরে নিজের বাসায় দুই ছেলে, এক মেয়ে, বৃদ্ধা মা ও ভাই-বোনদেরকে নিয়ে বসবাস করে আসছিলন।
সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে মুক্তাধর জানান, ওষুধপত্র কেনার সুবাদে অভি মেডিকেল হলের মালিক জিতেশের সাথে জ্যোৎস্নার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। জ্যোৎস্না কিছুদিন ধরে গোপন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জিতেশ জ্যোৎস্না মায়ের প্রেশার মাপার জন্য তাদের বাড়িতে যান। তখন জ্যোৎস্না তার গোপন সমস্যার কথা জিতেশকে জানালে সে তাকে দোকানে আসতে বলেন। ওইদিন বিকালে জ্যোৎস্না জিতেশের দোকানে গেলে তাকে দোকানে কাস্টমার রয়েছে বলে অপেক্ষা করতে বলে সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন।
মুক্তাধর আরও জানান, সন্ধ্যা হওয়ার পর বাসায় যাওয়ার জন্য জ্যোৎস্নার অস্থিরতা বেড়ে যায়। তখন ওই ফার্মেসির মধ্যে তাকে একটি ঘুমের ওষুধ খেতে দেন জিতেশ। এতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন জ্যোৎস্না তখন জিতেশ, তার দুই বন্ধু অনজিৎ এবং অসীত গোপ তিনজনই তাকে ধর্ষণের পরিকল্পনা করে। জিতেশ তার ফার্মেসিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার কক্ষে জ্যোৎস্নাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে ফার্মেসিটি তালা বন্ধ করে বাইরে চলে যায় জিতেশ।
এরপর রাত গভীর হলে আশেপাশের দোকান যখন বন্ধ হয়ে গেলে তখন জিতেশ ও তার দুই বন্ধু ফার্মেসী খুলে এনার্জি ড্রিংকস পান করে ধর্ষণ করেন।
বিষয়টি শাহনাজ তার পরিবারকে জানিয়ে দেবেন বললে জিতেশ ও তার বন্ধুরা তার গলায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং মুখে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে ওই ফার্মেসিতে থাকা ফল কাটার ছুরি দিয়ে লাশটি দুই হাত, দুই পা এবং গলা কেটে ছয়টি খণ্ড করে। এরপর দোকানে থাকা ওষুধের কার্টুন দিয়ে খণ্ডিত অংশগুলো ঢেকে রেখে ফার্মসিতে তালা লাগিয়ে চলে যায়। পরে খণ্ডিত লাশ পাশের একটি মাছের খামারে ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। কিন্তু ভোর হয়ে যাওয়ায় এবং লোকজন চলে আসায় তারা সেই কাজটি করতে পারেননি।
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তাধর বলেন, ‘এই ঘটনার পর সিআইডির এলআইসি শাখার একাধিক দল আসামি গ্রেপ্তারের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালায়। শুক্রবার রাজধানীর ভাটারা থানার নুরেরচালা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জিতেশকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর জগন্নাথপুর থানার পৌর শহরে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় অনজিৎ ও অসীত গোপকে।
Leave a Reply