হিফজুর রহমান তালুকদার জিয়া / রিয়াজ রহমান:;
সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ এর পাশে খাদ্য গুদাম সংলগ্ন নলজুর নদীর উপর ৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১১.৪ মিটার প্রস্থ রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে দৃষ্টিনন্দন আর্চ সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয় ২০২২ সালের ২৬ মার্চ। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মান্নান সেতুটি উদ্বোধনের পরপরই সেতুর কাজ শুরু হয়। উপজেলাবাসীর বহুল প্রত্যাশিত সেতুটি নির্মাণে ধীরগতির কারনে সময় বৃদ্ধির পর ও বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবেনা বলে জানান কাজের দায়িত্বে থাকা উপ- সহকারী প্রকৌশলী। সেতুটি নির্মান কাজ শেষ না হওয়ার কারনে পুরো উপজেলার মানুষ চরম দুর্ভোগ পরেছে। বর্তমানে সেতুর কাজ চলমান থাকলে ও কখন কাজ শেষ হবে নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। এলাকার লোকজনের অভিযোগ জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয় ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফলতিতে সেতুর কাজ চলছে ধীর গতিতে।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, নলজুর নদীর উপর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে সেতু নির্মাণ কাজটি পায় ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাটি বাংলা এন্টারপ্রাইজ। সেতুর নির্মাণ ব্যায় ধরা হয়েছে ১৩ কোটি ৪২লাখ ৮২ হাজার ৫৩১টাকা। সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩ সালের ২৫ জুন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদন এর প্রেক্ষিতে কাজের সময় বৃদ্ধি করে কতৃপক্ষ কাজ শেষের সময় সীমা নির্ধারন করেন চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। বর্ধিত সময়ের থেকে ২/৩ মাস বেশী সময় লাগবে বলে জানান কাজের দায়িত্বে থাকা উপ- সহকারী প্রকৌশলী। নির্মান কাজের ধীগতির কারণে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাসহ এলাকার জনগণের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। কারণ নলজুর নদী পার হয়ে জগন্নাথপুর সদর বাজারে যেতে এবং সদর বাজার হয়ে উপজেলার বিভিন্ন সরকারি অফিসে আসার একটি মাত্র সেতু ডাকবাংলো সেতু। সেতুটি ও অত্যান্ত ঝুঁকিপূর্ন ১৯৮৮ সালে এলাকাবাসি ও বাজার ব্যবসায়ীদের দানের টাকায় নলজুর নদীর ওপর ডাকবাংলো সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে সেতুর কাজ শেষ হয়। ২০২১ সালে সেতুর দেবে গেলে স্থানীয় প্রশাসন সেতুটি দিয়ে সকল প্রকার যাতায়াত বন্ধ করেদেন। এক বছর যান চলাচল বন্ধ থাকার পর জগন্নাথপুর পৌরসভা সেতুর দেবে যাওয়া অংশে স্টিলের পাটাতন বসিয়ে মেরামত করে সেতুটি হালকা যান চলাচলের জন্য চালু করেন।এলাকাবাসী ও এলজিইডি সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সালে নলজুর নদীর ওপর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে খাদ্য গুদামের সামনে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। পুরোনো এ সেতু ভেঙে নতুন করে দৃষ্টি নন্দন আর্চ সেতু নির্মাণের উদ্যোগে নেয় সরকার। ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাটি বাংলা এন্টারপ্রাইজ ২০২৩ সালের জুন মাসে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখনও শেষ হয়নি কাজ। এরই মধ্যে চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত কাজ শেষ করার সময় বৃদ্ধি করা হয়। আর্চ সেতু নির্মান কাজ শুরু করার আগে নির্মাণাধীণ সেতুর পাশে বিকল্প সেতু হিসেবে হেলিপ্যাড এলাকায় একটি বেইলি সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতুটি নির্মানের সময় এলাকার লোকজন বর্ষায় এটা ডুবে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে আরও উঁচু করার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিষয়টি আমলে না নেওয়ায় ভারী বর্ষন ও ঢলের পানিতে বেলী সেতু তলিয়ে গিয়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। নির্মানাধিন আর্চ সেতুর পাশে উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে একটি বাঁশের সেতু নির্মান করেন। এই সেতু দিয়ে মানুষ পায়ে হেঁটে যাতায়াত করছেন। অপরদিকে বর্তমানে হেলিপ্যাড এলাকার বিকল্প বেইলি সেতু দিয়ে যানচলাচল বন্ধ থাকায় বাধ্য হয়ে সকল প্রকার যানবাহন ঝুঁকিপূর্ন ডাকবাংলো সেতু দিয়ে চলাচল করছে। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়। যানবাহন গুলো ঘন্টার পর ঘন্টা জ্যামে থেকে নদী পারাপার হয় । প্রায় সময় ঘটে দূর্ঘটনা। এলাকাবাসী জানান, অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারনে যে কোন সময় বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
উপজেলা জাতীয় পার্টির দপ্তর সম্পাদক হাজী আব্দাল মিয়া বলেন, আর্চ সেতুটির নির্মাণ কাজ ধীরগতিতে চলায় ঝুঁকিপূর্র্ন ডাকবাংলো সেতু দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এতে পৌর শহরে সব সময় যানজট লেগেই আছে। তাই দ্রুত সেতুটির নির্মান কাজ শেষ করার দাবী জানাই।
এ ব্যাপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা মোঃ এবাদ উল্যাহ বলেন, নির্মাণাধীন সেতুর পাশে বিদ্যুতের তার ও খুঁটি এবং পুরোনো সেতু অপসারণ করতে সময় লেগেছে। সময় লাগার কারনে সেতুর কাজ শেষ করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। বর্তমানে আমরা নির্দিষ্ট সময়ের আগে কাজ করতে পারব।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের জগন্নাথপুর প্রকৌশলী সোহবার হোসেন বললেন। ঝুঁকিপূর্ণ ডাকবাংলো সেতু এলাকায় পুলিশ ও অতিরিক্ত আনসার সদস্য নিয়োগ করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। এখন আর্চ সেতুটির কাজ পুরোদমে চলছে। আগামী ডিসেম্বরে সেতুর কাজ হবে। এছাড়াও পানি কমে গেলে বিকল্প বেইলি সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হবে।
উপজেলার সর্বস্থরের জনসাধারন যানজট এর কবল থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত দৃষ্টি নন্দন আর্চ সেতুর কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানান।
Leave a Reply