নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদকে সামনে রেখে দেশের সকল মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের ‘ঈদ উপহার’ হিসেবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে ইমাম-মোয়াজ্জিনদের তালিকা আছে। এই রমজানে মসজিদ-মাদরাসা বন্ধ থাকায় তারা অসুবিধায় রয়েছে। ঈদের আগে তাদের আমরা সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করব।আজ (১৪ মে)গণভবন থেকে দেশে করোনাভাইরাসে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারের মধ্যে আড়াই হাজার টাকা করে নগদ সহায়তা বিতরণ কাজের উদ্বোধন করার সময় প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণা দেন।তিনি বলেন, অদৃশ্য করোনাভাইরাসের আক্রমণে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে। আমরা চেষ্টা করছি এ পরিস্থিতিতেও সব মানুষের কাছে সরকারের সহায়তা পৌঁছে দিতে।প্রধানমন্ত্রী জানান, করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতা বাড়ানোর মাধ্যমে আরও বেশি মানুষের কাছে সরকার সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারই অংশ হিসেবে আজ ৫০ লাখ পরিবারের কাছে নগদ অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর আগে দেশের ৬ হাজার ৯৫৯টি কওমি মাদরাসাকে ৮ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের সব মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনের জন্যও সহায়তার ব্যবস্থা করাহচ্ছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার মধ্যে আমাদের মসজিদগুলো স্বাভাবিকভাবে চলছে না। এই রোজার মাসে আমাদের মসজিদগুলোতে অনেক মানুষ আসে। অনেক টাকা-পয়সা ওঠে। কিন্তু এবার তেমন সুযোগ হচ্ছে না। আমি খবর নিয়েছি, মসজিদ কমিটিতে যারা আছেন, বিত্তশালী যারা আছেন, তারা সহায়তা করছেন। তারপরও আমি ভেবেছি, আমার পক্ষ থেকে কিছু করা দরকার।শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ভাসমান মানুষ এবং নিম্ন আয়ের মানুষ বিশেষ করে ঘাট শ্রমিক, রিকশাওয়াল, নির্মাণ শ্রমিক, নরসুন্দর, চায়ের দোকানদার, কুলি মজুরসহ দিন আনে দিন খাওয়া যেসব মানুষের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে তাদের জন্য কিছু নগদ অর্থ সহায়তার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে এই সহায়তা প্রদান করব। আমরা আগেই আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় ভাতা ও ১০ টাকা কেজিতে চালের ব্যবস্থা করি। ওই সুবিধা যারা পাচ্ছেন তাদের বাইরে যারা বর্তমানে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারাই কেবল এই সহায়তা পাবেন। এই লক্ষ্যে আমরা এক হাজার দুই শ কোটি টাকার ব্যবস্থা করেছি। এর আওতায় আড়াই হাজার টাকা করে এককালীন দেওয়ার প্রত্যেক পরিবার পাবে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, এই ক্ষেত্রে যাতে কোনো ঝামেলা না হয় তার জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এই টাকা পৌঁছে দেব। এ কোনো বাড়তি চার্জও লাগবে না। তিনি বলেন, আমরা জানি, সুবিধাপ্রাপ্তদের জন্য এটি বিশেষ কিছু নয়। তবু এখন রমজান মাস চলছে। সামনে ঈদ। এই সময় আপনাদেরকে যে কিছু দিলাম, এটিই সান্ত্বনা।
বিকাশ, রকেট, নগদ ও সিওর ক্যাশের মতো মোবাইল আর্থিক সেবার মাধ্যমে ৫০ লাখ পরিবারের মধ্যে সাড়ে ১২শ’ কোটি টাকার তহবিল বিতরণ করা হবে।
প্রতি পরিবারে ধরা হয়েছে চারজন সদস্য, সেই হিসাবে এই নগদ সহায়তায় উপকার ভোগী হবে ২ কোটি মানুষ।
জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, সদস্য, শিক্ষক, সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি এই তালিকা তৈরি করেছেন।
ভাতা পাওয়ার তালিকায় আছেন রিকশাচালক, ভ্যানচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক, কৃষিশ্রমিক, দোকানের কর্মচারী, ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত বিভিন্ন ব্যবসায় কর্মরত শ্রমিক, পোলট্রি খামারের শ্রমিক, বাস-ট্রাকের পরিবহন শ্রমিক ও হকারসহ নিম্ন আয়ের নানা পেশার মানুষ।
তালিকাভুক্তদের মধ্যে নগদ, বিকাশ, রকেট, এবং শিউরক্যাশ এর মাধ্যমে সরাসরি চলে যাবে এই টাকা, ফলে বাড়তি কোন ঝামেলা পোহাতে হবে না তাদের। টাকা পাঠানোর খরচ সরকার বহন করবে। এই টাকা উত্তোলন করতে ভাতাভোগীদের কোন খরচ দিতে হবে না।
Leave a Reply