দেশ বাংলা ডেস্ক :: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমির আল্লামা আহমদ শফী আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
পুরান ঢাকার আজগর আলী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন।
ইসলামী ঐক্য জোটের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আলতাফ হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ থেকে উনাকে হেলিকপ্টার করে ঢাকায় এনে সন্ধ্যার আগে আজগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালে ভর্তির পরই তিনি ইন্তেকাল করেন।
ইসলামি ঐক্যজোটের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ জানান, শাহ আহমদ শফীর বয়স ১০৩ বছর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্টসহ বার্ধক্যজনিত রুগে ভুগছিলেন।
দেশের কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কাছে তিনি ‘বড় হুজুর’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন হাটহাজারীর আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক (মুহতামিম) দীর্ঘদিন ধরে ছিলেন ।
দেওবন্দের পাঠ্যসূচিতে পরিচালিত দেশের অন্যতম পুরনো এ কওমি মাদ্রাসার শীর্ষ ব্যক্তি হিসেবে তিনি দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন, তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা বোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের (বেফাক) সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।
ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন চালিয়ে আসা হেফাজতে ইসলামের আমিরের দায়িত্বও তিনি পালন করে আসছিলেন। কওমি মাদ্রাসার নেতৃত্বের উপর ভর করেই
কিন্তু আল্লামা শফীর বয়স হওয়ায় হাটহাজারীর মাদ্রাসার কর্তৃত্ব নিয়ে সম্প্রতি বিরোধ দেখা দেয়। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির (শূরা কমিটি) বৈঠকে শফী পদত্যাগ করেন।
এর মধ্য দিয়ে হাটহাজারী বড় মাদ্রাসায় দৃশ্যত আহমদ শফীর সুদীর্ঘ দিনের কর্তৃত্বের অবসান ঘটে। শূরা কমিটির ওই বৈঠকে শফীর ছেলেসহ দুই শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বৈঠকের পরপরই আহমদ শফীকে মাদ্রাসা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেলে। তার পরদিনই ঢাকায় তিনি মৃত্যু ভরণ করেন।
শাহ আহমদ শফীর জন্ম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাখিয়ারটিলা গ্রামে। তার বাবার নাম বরকম আলী, মা মোছাম্মাৎ মেহেরুন্নেছা বেগম। আহমদ শফী দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জনক।
তার দুই ছেলের মধ্যে আনাস মাদানি হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক। অন্যজন মাওলানা মোহাম্মদ ইউসুফ পাখিয়ারটিলা কওমি মাদ্রাসার পরিচালক।
শফীর শিক্ষাজীবন শুরু হয় রাঙ্গুনিয়ার সরফভাটা মাদ্রাসায়। এরপর পটিয়ায়র আল জামিয়াতুল আরাবিয়া মাদ্রাসায় (জিরি মাদ্রাসা) লেখাপড়া করেন। ১৯৪০ সালে তিনি হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় যান, সেখানে চার বছর লেখাপড়া করেন।
১৯৮৬ সালে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক পদে যোগ দেন। এরপর থেকে টানা ৩৪ বছর ধরে তিনি ওই পদে ছিলেন।
দেশের আলেমদের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র আহমদ শফী বাংলায় ১৩টি এবং উদুর্তে নয়টি বইয়ের রচয়িতা। তবে নারীবিরোধী নানা বক্তব্যের জন্য বরাবরই সমালোচিত আহমদ শফী।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ আন্দোলন শুরুর পর তার বিরোধিতায় হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে মাঠে নেমে আলোচনায় উঠে আসেন আল্লামা আহমদ শফী।
Leave a Reply