বিবাহের পর মেয়েরা যখন বাবার বাড়ি কয়েক দিনের জন্য বেড়াতে আসেন তখনকার সময়টাকে নাইওর বলে। নাইওরি হয়ে আসার খবরটাই বাবা মায়ের কাছে অত্যান্ত আনন্দের ব্যাপার। যখনই মেয়ে আসে তখনই বাবার বাড়িতে উৎসব শুরু হয়। মেয়ে কোন কোন খাবার পছন্দ করে তা তৈরির আয়োজন করা হয়।স্বামীর বাড়ি যাওয়ার পর থেকে মেয়ে যতবারই বাবার বাড়ি আসুক না কেন সেটা নাইওরি হিসেবে বিবেচিত হয়। দেশের অন্যান্য জায়গায় মেয়েরা নাইওর আসার দিন কাল এবং ঋতুর পরিবর্তন থাকলে ও আমাদেরএলাকার মেয়েরা স্বভাবতই জ্যৈষ্ঠ মাসে পানসি নৌকায় অথবা ছৈ নায়ে চড়ে কয়েক দিনের জন্য নাইওরে আসেন । এই মাসে খাল বিল নদী নালা এবংহাওর গুলো নতুন জলে ভরে উটে। মাট ঘাট ডুবে চার দিকে পানি থৈ থৈ করে কি এক অপুর্ব সুন্দরের সমারোহে রুপান্তরিত হয় ধরনী। প্রাকৃতিক বৈচিত্র লীলায় মধু মাস যখন পুর্ণ যৌবনে মহা মগ্ন । সেই সময় ফলে ফলে বাগ বাগিচা পরিপুর্ণ ।হরেক রকম মৌসুমী ফলের সম্ভার । যেমন -আম, জাম,লিচু, কাঁঠাল, আনারস ইত্যাদি ফলের মৌ মৌ গন্ধে চারদিক মুখরিত।
নতুন নতুন খাদ্য সামগ্রী ও নানা ধরনের পিঠার উৎসবে অতিথি আপ্যায়নে মেতে উটে বাবার বাড়ির আঙ্গিনা যেন আনন্দ ঘন পরিবেশ, আমোদ প্রমোদের নেই শেষ। নতুন নাইওরিদের নানা রখম রসের গল্প আর আনন্দ ভরা হাসিতে বাবার বাড়ির অবস্থান কালের সময়টা আরো মধুময় হয়ে উঠে । এভাবেই অতিবাহিত হয় তাদের নাইওরি দিনের প্রতিটি মহুর্ত । মধ্যে বয়সী মেয়েদের অনেক সময় সাংসারিক ঝামেলায় নাইওরের সে সুখের সময়
সকলের জন্য এক হয়ে উঠেনা । কখনো কখনো দেখা যায় অনেক মেয়েরা সময় ও সুযোগ এর কারনে হয়তো বহুদিন অতিবাহিত হয়েছে বাবার বাড়ি যাওয়া হয়নি । কিন্ত মনের টান যে কত গভীর হঠাৎ হৃদয়টা ব্যাকুল হয়ে উঠ জন্মস্থান বাবার বাড়ির জন্য ।অধির আগ্রহে পথপানে প্রতিক্ষায় চেয়ে থাকেন ভাই বেরাদর কেহ যদি আসেন । তাহলে ঐ জোয়ারের নতুন জলে নৌকায় চড়ে নাইওর যাওয়া হবে । রুপালী নদীতে অথবা হাওরে ছৈ নায়ে কিংবা পানশী নৌকায় পাল তুলে মাঝি মাল্লারা যখন লাল শাড়ী পরনের নাইওরি নিয়ে দুর দুরান্তের পথে পাড়ীজমায়। সে দৃশ্যটা কিন্ত দুর থেকেও অনেকের মন কেড়ে নেয়।আর সে পাল তুলা নৌকার দৃশ্য দেখে মনটা বার বার আনছান করে উঠে । প্রতিক্ষায় কাটে দিনের প্রহর । মন কাঁদে বাবা মায়ের জন্য । প্রতিকুল পরিবেশে শতদুঃখ ও সুখের মাঝে বসবাস করে ও বাবার বাড়ির কথা ভুলতে পারেনা । প্রতিনিয়তই নাইওর যাওয়ার আশা বুকে লালিত করে ভোগতে থাকেন এক প্রকার তীব্র যন্ত্রনায় । তাই তাদের যন্ত্রনার কথা ভেবে বুক ভরা বেদনার ভাষা নিয়ে কোন এক বাউল কবি উদাস মনে লিখেছিলেন –
আরে ও ভাটির গাংগের নাইয়া
ঠাকু ভাইরে কইও যাইয়া
নাইওর নিতা আইয়া “
লেখক ঃকবি প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
মৌঃ মোঃ আব্দুল তাহিদ
Leave a Reply