মোঃ মুকিম উদ্দিন স্টাফ রিপোর্টার
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সকল হাওর গুলোতে চলছে বোরোধান কাটার এক মহা উৎসব। আর এ বৈশাখী তুলতে হাওর পাড়ের কৃষকদের সাথে কৃষাণীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন । সূর্যদয়ের সাথে সাথে শুরু করে সূর্যাস্তের পর পর্যন্ত বোরো মৌসুমের ধান তুলতে কৃষকদের পাশাপাশি কৃষাণীরাও কাজ করছেন সমহারে।
উপজেলা কৃষি অফিস ও হাওর পাড়ের কৃষক কৃষাণীরা জানান, এক ফসলী বোরো মৌসুমের ওপর এ উপজেলার কৃষকরা নির্ভরশীল। টিকমত বোরোধান তুলতে পারলেই এই উপজেলার কৃষক পরিবারের সারা বছরের আহার জোগানো হয়। এই বোরো ফসলের আয় দিয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনসহ ঘর বাড়ি নির্মাণ সংস্কার কাজ করতে পারেন তারা। টিকমত বোরো ফসল ঘরে তুলতে না পারলে এই উপজেলার কৃষক কৃষাণীদের দুঃখ কষ্টের সীমা থাকেনা।
আজ ২৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার কথা হয় নলুয়ার হাওরে অবস্থিত নলুয়া নগাও গ্রামের কৃষাণী বিন্দু রানী দাসের সাথে। তিনি তাঁর কলেজ পড়ুয়া মেয়ে স্বর্নালী দাসকে নিয়ে ধান শুকানোর কাজে ব্যস্থ রয়েছেন। ব্যস্থ সময়ের কাজের ফাঁকে বিন্দু রানী দাস বলেন, বোরো ফসলের ওপর নির্ভর করে আমি ও আমার স্বামী আর ৪ ছেলে মেয়ে এই ৬ সদস্যের পরিবার। এবার ১০ কিয়ার জমিতে বোরো ধান ফলাইছি। ফলন ভালো হইছে আমরা ভগবানের কাছে খুশি এবং ভগবান আমাদের সহায় আছেন। কলেজ পড়ুয়া স্বর্ণালী দাসের সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন করোনা পরিস্থিতিতে কলেজ বন্ধ রয়েছে বিধায় আমি বেকার সময় পার করতে ও আমার বাবা মার কষ্ট লাগবের জন্য আমি ধান তোলার কাজে কৃষক বাবা মার পাশে থেকে তাদেরকে সাহায্য করছি।
নলুয়ার হাওরের কাদিপুর গ্রামের বাসিন্দা মরফুল নেছা বলেন, আমরার পূর্ব পুুুরুষের আমল থাকি দেখরাম বৈশাখ মাসে আমাদের বাবা চাচারা ধান কাটার জন্য অন্য জেলা থেকে ধান কাটার মানুষ আইনা ধান কাটাইতা এই বছর দেখলাম মিশিনে ধান কাইট্টা মাড়াই দিয়া দেয় ইতার লাগি আমরার অনেক আরাম অইছে নাইলে রমজান মাসে আরো বেশী খষ্ট অইলনে।
তিনি আরো বলেন বৈশাখ মাসে কৃষকরা ধান কেটে মাড়াই দিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার পর কৃষানীরা ধানগুলো খলায় (মাঠে) শুকিয়ে বাড়ি নিয়ে বস্তাবন্দি ও বাড়ালে (উগাড়ে) তোলার কাজও কৃষাণীদেরকে করতে হয়। এবার প্রকৃতি অনুকূলে থাকায় আমরা সাথে সাথে ধান শুকিয়ে গুলায় তুলতে পারছি।
নলুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা কলকলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৪,৫,৬নং ওয়ার্ডের নারী সদস্য মোছাঃ রসিকা বেগম বলেন, হাওর পাড়ের ঘরে ঘরে এখন কৃষকদের পাশাপাশি কৃষাণীরা সমানতালে ধান তোলার কাজ করছেন। সকাল থেকে সূূর্যাস্তের পর পর্যন্ত পরিবারের কাজের পাশাপাশি কৃষাণীরা ধান শুকানো ও সংরক্ষণের কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, উপজেলায় এবার ২১ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় ধান তোলার কাজ চলছে। পুরুষের পাশে থেকে নারীরাও ধান তোলার কাজ করায় দ্রুত ধান ঘরে উঠছে। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ৯০ শতাংশ জমির ধানকাটা শেষ হয়ে গেছে। জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা আক্তার বলেন, কৃষি কাজে এখন কৃষকদের পাশাপাশি সমানভাবে কৃষাণীরা কাজ করছে। ধান মাড়াই, শুকানো ও পরিবারের অন্যান্য কাজেও নারীরা পারদর্শী। হাওর জোরে বৈশাখ মাসের ধান তোলার কাজে নারীদের কর্মচাঞ্চল্যতার আনন্দময় দৃশ্য এখন দৃশ্যমান উপজেলার সকল গ্রামগুলোতে।
Leave a Reply