সিলেট প্রতিনিধি::
সিলেটের বরখাস্তকৃত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে পারছেন না পুলিশের বড় কর্তারা। নির্দেশনা থাকার পরেও তাদের চোখে ধুলা দিয়ে এসআই আকবর লাপাত্তা। পলাতক আকবর তার বড় কর্তাদের ঘাটে ঘাটে পানি খাওয়াচ্ছেন। সেই সাথে এসআই আকবরের সাথে খেলায় পাত্তা পাচ্ছেন না তারা। আকবরের কৌশল আর বুদ্ধিতে পরাস্থ পুলিশের কর্তারা। প্রায় ১০দিন থেকে আকরের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই। যদি পিবিআই দাবি করছে আকবরকে ধরতে তাদের একাধিক টিম মাঠে কাজ করে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে সম্ভাব্য কয়েকটি স্থানে অভিযানও চালানো হয়। কিন্তু হদিস মিলছে না পুলিশ আকবরের। তার পালিয়ে যাওয়ার সাথে মহানগর পুলিশসহ অন্য কারও সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সেবিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ সদরদপ্তরের একটি তদন্ত দল। ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ইনচার্জ হিসেবে যোগ দেন এস আই আকবর। রায়হান হত্যাকান্ডের ঘটনায় গত ১২ অক্টোবর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কোথায় আছেন আকবর কবে নাগাদ গ্রেফতার হবেন এমন প্রশ্ন রায়হানের পরিবারের।
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) সিলেটসহ সারাদেশে ঝড় উঠে এসআই আকবর গ্রেফতারের বিষয়ে। ওইদিন সন্ধ্যার দিকে হাওয়ায় উড়া খবরটি হাওয়াতেই মিলিয়ে গেল। তার চেয়ে এখন বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে এই নৃশংস খুনের সাথে যারা নেপথ্যে রয়েছেন তারা এখন কোথায়। তাদেরকে কোথায় থাকা উচিত ছিল। কোন খুনের পর অন্য আর দশটি ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনার পর কি ঘটে? পুলিশ যে ঘটনাটি ঘটিয়েছে এতে যদি সাধারণ মানুষ জড়িত থাকত, তাহলে পুলিশ কী ধরনের আচরণ করতো? যে আচরণ পুলিশ মানুষের সঙ্গে করে সেই আচরণ তারা পুলিশ সঙ্গে করছে কিনা?
এদিকে, রায়হান হত্যা ঘটনার প্রধান হোতা পলাতক এস আই আকবরকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সিলেটি ব্যবসায়ী সামাদ খাঁন। তার গ্রামের বাড়ি সিলেটের গোলাপগঞ্জ আমনিয়া এলাকায়। সামাদ খাঁন তার ঘোষণায় বলেন, বন্দরবাজার ফাঁড়িতে পুলিশের বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে নির্মমভাবে মৃত্যুরবরণ করেছে রায়হান আহমদ। তার নিহতের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত এস আই আকবরকে ৭২ ঘণ্টার ভেতরে যে ধরিয়ে দিতে পারবে তাকে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার দেয়া হবে। সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে সামাদ খাঁন এ ঘোষণা করেন।
সিলেট পিবিআই পুলিশ সুপার খালেকুজ্জামান বলেন, এসআই আকরকে ধরতে পিবিআই একাধিক টিম কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থানে আকবরকে ধরতে অভিযান চালানো হয়। তিনি আরও বলেন, পিবিআই নানা বিষয় মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছে। যাতে করে এই মামলাটি সার্বিক বিষয় তদন্তে প্রকাশ পায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, অভিযুক্ত এসআই আকবর দেশেই রয়েছে। সে যদি পালিয়েও যায় তাহলে তাকে বিদেশ থেকে ধরে নিয়ে আসা হবে। সে কোন পাবেই রক্ষা পাবেনা। আকবর যাতে পালিয়ে না যায় সেজন্য ঘটনার পর থেকে সীমান্ত এলাকায় সর্তকর্তা জারি করা হয়েছে।
সোমবার (১৯ অক্টোবর) সিলেটের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর আদালতের বিচারক মো. জিহাদুর রহমানের খাস কামরায় পুলিশ কনস্টেবল দেলোয়ার, সাইদুর ও শামীম সাক্ষ্য প্রদান করেন। এই তিনজনই বন্দরবাজার ফাঁড়িতে কর্মরত রয়েছেন। রায়হানকে নির্যাতনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তারা। অপরদিকে মঙ্গলবার বরখাস্তকৃত পুলিশ কনস্টেবল টিটুকে ৫দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, ১১ অক্টোবর ভোরে পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতন করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় রায়হানের মৃত্যু হয়। রায়হান সিলেট নগরীর আখালিয়ার নেহারিপাড়ার মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরীর রিকাবিবাজার স্টেডিয়াম মার্কেটে এক চিকিৎসকের চেম্বারে কাজ করতেন। এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর রাতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু আইনে এসএমপির কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী। মামলাটি পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশ পিবিআইতে স্থানান্তর হয়। তদন্তভার পাওয়ার পর পিবিআইর টিম ঘটনাস্থল বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ি, নগরীর কাস্টঘর, নিহতের বাড়ি পরিদর্শন করে। সর্বোপরি লাশ কবর থেকে তোলার পর পুনরায় ময়নাতদন্ত করা হয়।
নিহত রায়হানের মরদেহে ১১৩ আঘাতের চিহ্ন উঠে এসেছে ফরেনসিক রিপোর্টে। এসব আঘাতের ৯৭টি ফোলা আঘাত ও ১৪টি ছিল গুরুতর জখমের চিহ্ন। এসব আঘাতগুলো লাঠি দ্বারাই করা হয়েছে। অসংখ্য আঘাতের কারণে হাইপোভলিউমিক শক ও নিউরোজেনিক শকে মস্তিষ্ক, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনিসহ গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো কর্মক্ষমতা হারানোর কারণে রায়হানের মৃত্যু হয়েছে।
Leave a Reply