দৈনিক দেশ বাংলা ডেস্ক::
ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের দুবারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হক জজ মিয়া মানবেতর জীবনযাপন করছেন।সহায়সম্বলহীন সাবেক এমপি এনামুল হক জজ মিয়ার একসময় সবই ছিল। তবে ক্ষমতা, অর্থ, সম্পদ, সন্মান সব কিছু হারিয়ে এখন পৌর শহরের সালটিয়া গ্রামে একটি ভাড়া বাসায় খেয়ে না খেয়ে পরিবার নিয়ে অ’তি ক’ষ্টে জীবনযাপন করছেন তিনি।এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি সবার নজরে আসে। শনিবার বিকালে জাতীয় পার্টির সাবেক এই এমপির দুর্দশার খবর পেয়ে এগিয়ে আসেন পৌর মেয়র এসএম ইকবাল হোসেন সুমন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদের এশিয়া ডায়ালগে প্রকাশিত ‘মানি পলিটিকস অ্যান্ড দ্য স্ট্রাকচারাল পাওয়ার অব বিজনেস ইন দ্য পলিটিক্যাল ইকোনমি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক নিবন্ধে উঠে আসে, আশির দশকের মাঝামাঝিতে এসে দেশের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে নতুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায় হয়ে ওঠেছে অর্থের রাজনীতি। অর্থ হয়ে ওঠে দলীয় নীতিমালা এবং স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। নব্য ধনীদের জন্য দলীয় কমিটি ও বিশেষ করে সংসদে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা দখলের সুযোগ করে দেয় টাকা। আমি এমন সব অবস্থান থেকে শুধু টাকার জন্য মেলে ধরতে পারিনি নিজেকে।কারণ আমি কোন কালো টাকা হাত করিনি। আমি যখন এমপি ছিলাম আমার পরিবারের কোন লোক আমার কাছে দুই টাকা অর্থ সাহায্যের জন্য কোনদিন আসেনি। ভালো করে লক্ষ করে দেখবেন আমার বাপ দাদার যে ঘরে টুকু ইসলামি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ছিলো তার কোন পরিবর্তন নেই।পিতার সম্পত্তির ভাগ আমার বন্টনের প্রায় সবটুকু বিক্রি করে রাজধানী ঢাকায় জমি ক্রয় করে বাড়ি নির্মাণে সব ব্যয় করি। যা আমার স্ত্রী- সন্তানের নামে ছিলো।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আমাকে কালো তালিকায় ফেলা হয়।যা ছিলো মিথ্যা।তদন্ত করে আমার অর্জনে কোন কালো টাকা পায়নি প্রশাসন।
ব্যবসায়ীরা রাজনীতি করছেন আর রাজনীতিবিদরা ব্যবসা করছেন। এ অশুভ মিলনের ফলে ব্যবসায়িক রাজনীতির জন্ম হয়েছে আজ।
আমি রাজনীতিবিদ দের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি আজ রাজনীতিবিদ নেই আছে রাজনীতিজীবি। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে জিয়া ও এরশাদ যখন প্রো-পিপল পলিসি চেঞ্জ করে দিল, তখন ধনতন্ত্রের অবাধ বিকাশের পথ হলো। সে সময় ধীরে ধীরে রাষ্ট্রক্ষমতাকে আয়ের উপায় হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এসব বিষয় আজ আমার মুখে মানায় না।কারণ প্রতি প্রভাতে ঘুম থেকে উঠে আমাকে দিন রাতের আহারের সন্ধানে ছুটতে হয়।কখনও মেলে কখনও মেলে না। আমি স্যুট টাই পছন্দ করতাম। ময়লা কাপড় কখনও ব্যবহার করিনি। গত ১লা অক্টোবর পাঞ্জাবিটি পড়েছিলাম। আজ ২৩ অক্টোবর। ধোলাই করতে পারছিনা সাবান কেনার অভাবে। এতে আমার লজ্জার কিছু নেই।কারণ আমি কারো টাকা মেরে খাইনি। বরং আমাকে দেখলে পালায় কিছু বড়লোক। আমি হাজারো কষ্টে ভিতরে হাসি। আমি এদের কাছে এখনও অর্ধকোটি টাকা ঋণ পাই। তারা আমাকে দেয় না আজ শক্তিশালী তারা। এটাই নিয়ম। তবে বিশ্বাস করুন আমার খুব কষ্টার্জিত এই পয়সা এরা নিয়েছে। আজ যখন ২৫শ টাকায় ভাড়ায় ছোট্ট একটি রুমে ঘুমাতে যাই তখন মনে হয় রাণী ভবাণীর কথা। আমাকে ছেড়ে গেছে আপনজন।আমার যা ছিলো সব নিয়েছে। এতে আমার দুঃখ নেই। আজ ৩৩ বছর কাটছে বড় মেয়ে জয়ার মুখ দেখিনি সাথে আছে পারিসা, রামিমা দুইজন। খুব ইচ্ছে করে সন্তানের প্রিয়মুখ গুলি দেখতে। জীবনের শেষ প্রান্তে আমি দাঁড়িয়ে। সন্তানের মুখগুলো বহুকাল না দেখতে পেয়ে প্রতি রজনীতে ক্ষুধার্ত ও ক্লান্ত দেহ নিয়ে ঘুমতে গেলে বুক ফেটে কান্না আসে। আমি দুইবার এমপি ছিলাম দাবি দিবো না কোনদিন। আমি মুক্তিযুদ্ধ করেছি দাবি দিবো না কোনদিন। আমার মুক্তিযুদ্ধের দরখাস্ত যারা ছুড়ে ফেলেছেন তাদের বলছি তোমরা আমাকে দিলেনা কিন্তু এখনও কিছু অবশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা বেঁচে আছেন অন্ততঃ তাদের মরণের আগে কিছু করে দিও।বঙ্গবন্ধু একনিষ্ঠ আপনজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ গফরগাঁও উপজেলার কৃতি সন্তান আবুল হাসেম এমপি আমার মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ সাক্ষী।এরা যেন হাজারো অসৎপথে আসা অশুভ মুক্তিযোদ্ধার মিছিলে হারিয়ে না যায়। আমার শেষ আশ্রয়ের জন্য যাকে জীবনসঙ্গী করেছি সে জন্মগত দরিদ্র আর আমি কর্মগত উদার দরিদ্র। আমার ছোট্ট শিশু ছেলেটি খুব অসুস্থ। তাঁর জন্য চিকিৎসা জরুরি হলেও পিতা হিসেবে আমি বার বার সেবা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি। হে অবুঝ আমাকে ক্ষমা করো। আমার ভাতিজা নাদিম মাহমুদ সায়ের খুব বড় মনের অধিকারী। সে মাঝে মাঝে আমায় ইশারায় ডেকে হাতে গোপনে কিছু অর্থের যোগান দিয়ে চলে যায় সায়ের। পিছন ফিরে দেখি আমার ভাতিজা বড় হয়েছে। তাকে এবং তাদেরকে দেখা হয়নি কখনও চক্ষু মেলিয়া। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার স্বপ্নের কথা আমার ছোট্ট শিশুটিকে দেখে মনে হয়। আমি পৃথিবীর এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ঘুরে ফিরেছি। শিশুটির প্রয়োজনে আজ গাভীর দুধের দেখা নেই কতদিন। বিমান নয় গফরগাঁও উপজেলা শহরে রিক্সায় উঠতে পারছিনা। রিক্সার ২০ টাকা ভাড়া চাওয়ার জন্য মনে হলো অনেক বেশি।তাই পায়ে হেঁটেই চলি। আমার অতিত টয়োটা গাড়ির মতই একটি গাড়ি কিছু কর্দমাক্ত মাটি পানি ছিটিয়ে দিলো কাপড়ে। আমি কি কখনও এমন কাজ করেছিলাম! না করিনি তো। দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হায়াৎ মামুদ বলেছিলেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে খুব ভালো কিছু ঘটবে না।’ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মা-বাবাদের প্রতি তিনি অনুরোধ করেছিলেন, তাঁরা যেন ছেলেমেয়েদের প্রতি লক্ষ রাখেন আর চলতে বলেছিলেন সেভাবে, যেভাবে চললে আগামী প্রজন্ম পরার্থপর হয়। শুধু নিজের নয়, সবার কথা ভাবে।’ আমার সন্তানের মত অন্যেরা যেন না বাঁচে। এমন বেঁচে থাকা বড় কষ্টের। আমি কি রাষ্ট্রের বয়স্ক নাগরিক ভাতা পেতে পারি?যদি যোগ্য হই একটা চাই।দিবেন তো? হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতীর জনকের কন্যার শেখ হাসিনা আমার শিশু পুত্রের বেঁচে থাকার জন্য হাত বাড়ান প্লিজ। I don’t want it for myself. I’m talking about child starvation, I don’t understand politics. I can understand the pain of survival. জবানবন্দিটির বর্ণনায় ছিলেন সাবেক দুইবারের সাংসদ এনামুল হক জজ। আঁখি যুগলে শ্রাবণের জলধারা।
আ: দে:জি:
Leave a Reply