একরাম হাসান::
চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর আল মামুনের সঙ্গে বিয়ে হয় তামান্নার। মাত্র ৫৩ দিন পার হয়েছে তাদের বিয়ের। ২০ বছর বয়সেই তাকে বিয়ে দিয়ে দেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু বিয়ের দুই মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই নিভে গেলো তার জীবনপ্রদীপ।
সোমবার (২৩ নভেম্বর) লাশ হতে হলো দক্ষিণ সুরমা থানার ফুলদি এলাকার মেয়ে নববধূ সৈয়দা তামান্না বেগমকে। সিলেট নগরীর উত্তর কাজীটুলার এলাকার অন্তরঙ্গ ৪/এ বাসার দুতলার একটি কক্ষ থেকে সোমবার দুপুর দেড়টায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগ থেকেই তামান্নার স্বামী আল মামুন পলাতক রয়েছেন।
পুলিশের ধারণা, ‘স্ত্রীকে হত্যা করে পালিয়েছে স্বামী এবং রোববার রাতের কোনো এক সময় এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) কোতোয়ালি থানাপুলিশ তামান্নার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।’
জানা গেছে, ‘তামান্নার স্বামী মো. আল মামুনের জন্মস্থান বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার হোগলারচরে। তবে তার ভোটার আইডি কার্ডে ঠিকানায় রয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বারুতখানা এলাকার নাম। তিনি বারুতখানা এলাকার আবুল কাশেম সরদার ও আমম্বিয়া বেগমের ছেলে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের গোলাপগঞ্জের খান কমিউনিটি সেন্টারে তামান্নার সঙ্গে আল মামুনের বিয়ে হয়। মামুন নগরীর জিন্দাবাজারস্থ আল-মারজান শপিং সেন্টারের ঐশি ফেব্রিক্সে কাজ করেন।
নিহত তামান্না বেগম দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের ফুলদি গ্রামে। তবে মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার এমসি একাডেমি সংলগ্ন একটি বাসায় ভাড়া থাকেন।
তামান্নার খালাতো ভাই জানান, ‘গত রোববার রাত ৯টার দিকে তামান্নার বোনের সঙ্গে তার মা’র কথা হয়। তখন স্বাভাবিকভাবেই কথা বলেন তামান্না। কিন্তু সোমবার সকাল থেকে তামান্না ও তার স্বামী আল মামুনের মোবাইল ফোন নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।’
অপরদিকে, তামান্নাদের ভাড়াটে ঘরের (কাজীটুলাস্থ অন্তরঙ্গ ৪/এ) দরজা সকাল থেকে তালাবদ্ধ দেখে বাড়ির মালিকের সন্দেহ হয় এবং তিনি পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ সোমবার দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দরজা ভেঙে ভিতরে দেখেন বিছানায় তামান্নার লাশ দেখতে পায়। এসময় তামান্নার গলায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যায় এবং মাথার কাছে পাওয়া গেছে খোলা একটা কেকের প্যাকেট।
বিয়ের আগের দিন অর্থাৎ ২৯ সেপ্টেম্বর আল মামুন কাজীটুলার এই বাসাটি ভাড়া নিয়েছিলেন।
পুলিশের ধারণা, গলায় কিছু পেঁচিয়ে ফাঁশ দিয়ে তামান্নাকে হত্যা করা হয়েছে। গলায় তার দাগও আছে।
এদিকে, তামান্নার খালাতো ভাই মো. ইকবাল জানান, ‘মামুন আগেও একটি বিয়ে করেছে। সেই বিয়ের বিষয়টি গোপন করে সে তামান্নাকে বিয়ে করে। এ ক্ষেত্রে মামুনকে সহায়তা করেন মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্সের শাহনাজ পারভিন নামের এক মহিলা কর্মকর্তা।’
ইকবাল আরও বলেন, ‘ওই মহিলা মামুনকে তার চাচাতো ভাই বলে পরিচয় দেন এবং তামান্নার পরিবারে বিয়ের জন্য পীড়াপিড়ি করতে থাকেন। বিয়ের সময় টাকা দিয়েও শাহনাজ পারভিন সাহায্য করেন তামান্নার পরিবারকে। এসময়ের শাহনাজ পারভিনের আচরণই আমাদের কাছে সন্দেহজনক ছিলো। এ বিয়েতে তামান্নার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যদের অসম্মতি ছিলো। কিন্তু শাহনাজ পারভিনের পীড়াপিড়িতেই এ বিয়েটি হয়।’
মামুনের বিরুদ্ধে তার আগের স্ত্রীর দায়ের করা একটি মামলাও রয়েছে জানান তামান্নার খালাতো ভাই ইকবাল। সে স্ত্রীর ঘরে একটি সন্তানও রয়েছে মামুনের।
কোতোয়ালি থানায় তামান্নার ভাই সৈয়দ আনোয়ার হোসেন রাজা বাদি হয়ে মামলার দেয়ার প্রস্তুতি চলছে।
Leave a Reply