বিএনপি::
দ্বিতীয় ধাপের ৬০টি পৌর নির্বাচনের সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ৪৮, বিএনপি ৪, জাতীয় পার্টি ১, জাসদ ১ ও স্বতন্ত্র ৭টিতে বিজয়ী হয়েছে। আজ ১৬ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনের ফলাফল থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
আমার আলোচনার বিষয় ভিন্ন একটি ইস্যু। পারিবারিক চাকর ও চামচাদের বলয়ের প্রভাবের একটি উদাহরণ দিতে চাই আজকের ভোট থেকে। কোথায়ও চাকরের ভাইয়ের দাপট, কোথায়ও বা চামচার দাপট থাকতে পারে। কিন্তু জনগনের কাছে এসব চাকর আর চামচাদের যে, কোন মূল্য নেই তাঁর জ্বলন্ত উদারণ হচ্ছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে পৌরসভায়র নির্বাচনে আজকের ফলাফল। চামচা আর চাকরের দাপটকে লাথি মেরেছে ওই এলাকার জনগণ। রাজনীতি যদি জনগনের জন্য হয়, তাহলে জনগণ দিতে হয়। চাকর আর চামচার ইচ্ছা নয়, জনগনের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটনানো হচ্ছে রাজনীতির মূল থিওরি।
এবার আসুন দেখে নেই চামচা আর চাকরের ইচ্ছার প্রতিফলনে কি ঘটেছে ওখানে।
যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সেক্রেটারি কয়সর এম আহমদ। বিএনপিতে তিনি অসীম ক্ষমতা রাখেন বলে শোনা যায়। রাখতেই পারেন। যোগ্যতা থাকুক বা না থাকুক, বক্তব্যে জিয়াউর রহমানকে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে হত্যা করুক আর যাই করুক, যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সেক্রেটারি বরে কথা। যুক্তরাজ্যে বসবাস করলেও জগন্নাথপুরের নিজের এলাকায় বলয় সৃষ্টি করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শোনা যায়, সুনামগঞ্জে তাঁর ইচ্ছার বাইরে কিছুই হয় না। তাঁর ইচ্ছায় সব কমিটি হয় ওখানে। ক্ষমতা থাকলে এটা যে কেউ করতেই পারেন। এতে কোন সমস্যা দেখছি না। কিন্তু তারা ক্ষমতা দেখান নিজের যোগ্যতার জোরে নয়। শীর্ষ নেতৃত্বের উপর নির্ভর করে। শীর্ষ নেতৃত্বের উপর নির্ভর করে ধরাকে সরাজ্ঞানও করেন অনেকেই। আর করবেনই না বা কেন! তারা যা চান, যেভাবে চান সেটা সেইভাবেই হয়। এর ব্যতিক্রম হয় না। কমিটি গঠন ও নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে চামচা ও চাকরের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়ে শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার শ্লোগানও দেন আবার তাঁরাই।
কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্ব কি একটু খোজ রাখেন যারা তাঁকে নির্ভর করে ক্ষমতার দাপট দেখান তাদের পায়ের নিচে মাটি আছে কি না! এর ছোট্ট উদাহরণ হচ্ছে পৌর নির্বাচনে সুনামগঞ্চ জেলার জগন্নাথপুরের ফলাফল।
পৌর নির্বাচনে যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সেক্রেটারি সাহেবের বিশেষ অনুকম্পায় তাঁর বলয়ের একজনকে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয় বিএনপি থেকে। বেশ ভাল কথা। সুতরাং যুক্তরাজ্য বিএনপি’র সেক্রেটারি যা চাইবেন তা হতেই পারে। তবে মজার বিষয় হচ্ছে তাঁর মনোনীত প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ভোট পেয়েছেন মাত্র ৮১৭টি। শোচনীয়ভাবে জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে ওই ধানের শীষ প্রার্থীর। তবে কি বলবেন, আওয়ামী লীগ ভোট কারচুপি করেছে? নির্বাচন সুষ্ঠু হয় নাই! হলে ধানের শীষই বিজয়ী হতো ওখানে!
আপনাদের এই যুক্তি খাটানোর সুযোগ নাই ওখানে। আওয়ামী লীগ কারচুপি করে থাকলে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হতেন। কিন্তু নৌকাও পরাজিত হয়েছে ওখানে। বলা যায় ওখানে বিজয়ী হয়েছে জনগণ। জনগণ দেখিয়ে দিয়েছে যুক্তরাজ্য থেকে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রার্থী নাজিল করে দিলেই তারা গ্রহন করে নেয় না। জনগনের কাছে গ্রহনযোগ্য হতে হয় আগে। তারপর প্রার্থীকে মানুষ বিবেচনা করে। যারা মনে করেন কলাগাছকে ধানের শীর্ষ দিলেও মানুষ মেনে নিবে, সেই চিন্তাকে জগন্নাথপুরের মানুষ লাথি মেরেছে।
আরো হাস্যকর বিষয় হচ্ছে কয়সর সাহেবের নিজ গ্রামেই পায়ের নিচে মাটি নাই। দেখে নিতে পারেন তার গ্রাম ও আশে-পাশের গ্রামে কেমন ভোট পেয়েছে তার প্রার্থী-
পৌরসভার সিলিমপুরের বাসিন্দা কয়সর।তার গ্রামসহ আশপাশ ভোটকেন্দ্র পাচঁটি।সেগুলোতে ধানের শীষে প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা নিম্নে দেওয়া হল।
১/ইকড়ছই ১নং সেন্টার ১৫ ভোট।
২/ইকড়ছই ২নং সেন্টার ২৪ ভোট।
৩/ভবানীপুর ১নং সেন্টার ৮১ভোট।
৪/ভবানীপুর ২নং সেন্টার ১৩ ভোট।
৫/শেরপুর সেন্টার ২৩ভোট।
অতএব, যারা মনে করেছিলেন ধানের শীষ দেওয়ার ক্ষমতা আছে দিয়ে দিলাম যুক্তরাজ্র বিএনপি সেক্রেটারির ইচ্ছা অনুযায়ী, তারা বা তাঁকে ত্রিপল ধন্যবাদ! ক্ষমতার অপপ্রয়োগ বলে কথা। ক্ষমতার অপপ্রয়োগ জনগণতো পছন্দ করেনই না, আল্লাহও পছন্দ করেন না।
এবার আসা যাক ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে যাকে দল থকে বহিস্কার করা হয়েছে তাঁর ফলাফল কি, সেটা দেখি। জগন্নাথপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আগেও এই পৌরসভার মেয়র ছিলেন। তাঁকে প্রথমে উপজেলা সভাপতির পদ থেকে আগেই বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি এবারও দলীয় প্রতীকে মেয়র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। বারবার একজনকে প্রার্থী হিসাবে না দিয়ে নূতন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারলে ভাল। কিন্তু নূতন নেতৃত্ব তৈরি না করেই যদি চামচা আর চাকরদের কথায় পুরাতন নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে ক্ষমতার অপপ্রায়োগ করে যাকে ইচ্ছা তাঁকেই মনোনয়ন দেওয়া হয়, সেটার নাম নূতন নেতৃত্ব তৈরি করা নয়। যাকে ইচ্ছা তাঁকে মনোনয়ন দিলেই যে মানুষ গ্রহন করে নিবে না, এটা জগন্নাথপুরের পৌর নির্বাচন থেকেই অনুমান করা যায়। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সাবেক উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র জনগনের সাথে সম্পৃক্ততা রেখে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রতিরেযাগিতায় নেমেছিলেন। এজন্য ক্ষমতার ডাবল অপপ্রযোগ দেখিয়ে গত এক সপ্তাহ আগে তাঁকে দল থেকে বহিস্কার করানো হয় যুক্তরােেজ্যর প্রভাবে। বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃত্বের এই অন্যায্য বহিস্কারাদেশের কঠিন জবাব দিয়েছেন জগন্নাথপুরবাসী। বিএনপি’র ধানের শীষের প্রার্থী জামানত হারিয়েছে। এছাড়াআওয়ামী লীগকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি থেকে এক সপ্তাহ আগে বহিস্কৃত প্রার্থী।
সুতরাং ক্ষমতা আছে বলে দেখানো যায়। কিন্তু জনগণ সুযোগ পেলেই সেই ক্ষমতা দেখানোর জবাব দিয়ে দেয়। যেমনটা জনগন জবাব দিয়েছে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে।
লেখক ওলিউল্লাহ নোমান।
Leave a Reply