মুহিবুর রেজা টুনু সুনামগন্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার বশিরপুর মৌজায় মালিকানাধীন জায়গায় উপজেলা প্রশাসন গৃহ নির্মাণ করছে বলে অভিযোগ করেছেন জায়গার মালিকগণ। আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন বলে তারা জানান। ঘর নির্মাণে নিষেধ থাকার পরও বেআইনিভাবে চালিয়ে যাওয়া নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি করেছেন ভূমি মালিকরা। বুধবার সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভূমি মালিকদের পক্ষে এসব অভিযোগ করেন ছাতক উপজেলার গণিপুরের মৃত কাজী রাজা মিয়ার ছেলে কাজী আনছার মিয়া।
লিখিত বক্তব্যে তিনি ঘর নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে বিভাগীয় কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি দাবি জানিয়ে বলেন, প্রয়োজনে সরকারকে আমরা ঘর নির্মাণের জন্য জায়গা দান করব। কিন্তু আমাদের স্বত্ব স্বীকার করতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ না নিলে আদালত অবমাননার মামলা করার কথাও জানান কাজী আনছার মিয়া।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণিপুর গ্রামের পার্শ্ববর্তী দক্ষিণ সুনামগঞ্জের বশিরপুর মৌজার জেএল নং-২২৬, এসএ খতিয়ান নং-০১ ও ২২ নং দাগে ১৫৬.৯০ একর বোরো, আউশ, আমন ও আংশিক বাড়ি রকম ভূমির মালিক তারা। গৌরি চরণ দাস তালুকের অন্তর্গত মোহাম্মদ হাতিম, মোহাম্মদ তারিক, মোহাম্মদ মনিয়র, মোহাম্মদ ফাজিল, মোহাম্মদ কাদির, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, ফজর বিবি, মোহাম্মদ আজিম, মোহাম্মদ আলীম, কলিম, মোহাম্মদ ইলাই বক্স, মোহাম্মদ আঃ রহিম, মোহাম্মদ আঃ রশিদ গং। এরমধ্যে ২২ নং দাগের ১৫৬.৯০ একর ভূমিতে সরকার ঘর নির্মাণ শুরু করেছে। শতবছর ধরে তা ভোগ দখল করে আসছেন তারা। এসব ভূমি ১৯৫২ সালের এসএ রেকর্ডে ভুলক্রমে সরকারি খতিয়ানভূক্ত হয়। রেকর্ড সংশোধনের জন্য ১৩৮ জন উত্তরাধীকারের পক্ষে ২০০১ সালে সুনামগঞ্জ যুগ্ম জেলা জজ ১ম আদালতে স্বত্ব মামলা (নং-০৫/২০০১) দায়ের করি। পরবর্তিতে আমরা হাইকোর্টে আপিল করি যার নং ৩৮১/২০০৭ইং। দীর্ঘদিন পর শুনানী শেষে ২০১৯ সালের ২২ মে আপিলের রায় প্রদান করা হয়। রায়ে উল্লেখ করা হয়, বিবাদী অর্থাৎ জেলাপ্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার(ভুমি) ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা গনের সেই জায়গায় কোনো স্বত্ব নেই ও ছিল না। উচ্চ আদালতের রায়ের পর সরকারের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে লীভ টু আপিল করা হয়েছে। যার পরবর্তী শুনানী আগামী ডিসেম্বরে হওয়ার কথা রয়েছে। মহামান্য সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা আদালত অবমাননার শামিল বটে।
বক্তব্যে কাজী আনছার মিয়া আরও জানান, উচ্চ আদালত তাদের পক্ষে সেই ভূমির অধিকার ও সেখানে বাধা প্রদান না করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া মালিকদের পক্ষে তিনি ২০২০ সালে সুনামগঞ্জের সিনিয়র সহকারী জজ সদর আদালতে ২২ দাগে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে উল্লেখ করে স্বত্ব মামলা করেন(নং-১১০/২০২০ইং)। একই আদালতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করলে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর আদালত স্থিতাবস্থা জারি করেন যাহা গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বর্ধিত করা হয়। সর্বশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি আদালতের বিচারক আনোয়ারুল কবির বিবাদীদের বিরুদ্ধে মোকাদ্দমা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নালিশা ভূমিতে ভোগ দখলে কোনো প্রকার বাধা ও নির্মাণ কাজ করতে পারবেন না বলে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। আদালতের এ আদেশ বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকের শরনাপন্ন হলে তার নির্দেশে রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টরেট আব্দুল মান্নান গত ১০ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ সুনামগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়ে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অনুরোধ করেন। কিন্তু তাও আমলে নেওয়া হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে ভূমি মালিকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কাজী আকলু মিয়া কাজী মিছলু হোসেন, কাজী তকলিছ মিয়া, কাজী জহুর আলী,কাজী সুরত আলী, কাজী মতছির মিয়া, কাজী লিলু মিয়া প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে সুনামগঞ্জে কর্মরত বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগন উপস্থিত ছিলেন।
Leave a Reply