১৭৯১ সালের ২২ ও ২৩ আগস্ট বর্তমান হাইতি ও ডমিনিকান রিপাবলিক অঞ্চলে এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরবর্তীতে ব্রিটেন ১৮০৭ সালে ও যুক্তরাষ্ট্র ১৮০৮ সালে তাদের আফ্রিকান দাসদের মুক্তি দেয়। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র যথাক্রমে ১৮৩৩, ১৮৪৮ ও ১৮৬৫ সালে আইন করে দাসপ্রথা নিষিদ্ধ করে।
মানব ইতিহাসের একটি অন্ধকার অধ্যায়ের নাম দাসপ্রথা। আধুনিক সময়ে যত অদ্ভুত-ই শোনাক না কেন, এক সময় মানুষের ঘরে ‘মানুষ’ দাস থাকবে এটাই ছিল স্বাভাবিক। বিত্তশালীদের আভিজাত্যের পরিচয় তুলে ধরতে সাহায্য করত ক্রীতদাসের সংখ্যা। প্রাণে মেরে ফেললেও কোনো ধরণের বিচারের সম্মুখীন হতে হতো না মালিককে।
গ্রিক সভ্যতা থেকে দাসপ্রথার উদ্ভব হলেও রোম সভ্যতা, বৌদ্ধযুগসহ সভ্যতার সকল পরতে-পরতে দাসত্ব প্রথার উপস্থিতি ছিল। প্রাচীন বাংলাসহ ভারত উপমহাদেশেও দাসপ্রথার প্রচলন ছিল। ইংরেজ আমল পর্যন্ত এদেশে দাসবাণিজ্য চলেছে। বিশ্বব্যাপী দাসবাণিজ্যের বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ছিল আফ্রিকান নিগ্রো দাসের। প্রচন্ড শক্তি ও সুঠাম দেহ-ই সেযুগে নিগ্রোদের জন্য অভিশাপে পরিণত হয়। তখন বিপুল সংখ্যক নিগ্রোদের জোর করে ধরে নিয়ে যাওয়া হতো। তাদের বেশিরভাগকে বিক্রি করে দেওয়া হতো ইউরোপের বাজারে। বর্তমান বিশ্বের প্রধান পরাশক্তি আমেরিকাই ছিল দাস নির্যাতনের তীর্থস্থান। ১৭৭৬ সালের ৪ঠা জুলাই গ্রেট-ব্রিটেন থেকে আমেরিকার স্বাধীনতা অর্জনে দাসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার পরেও দাসদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। অবশেষে দাসপ্রথা বিলুপ্তির আন্দোলনে ১৮৬১ সালে আমেরিকায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এ গ্রহযুদ্ধে তৎকালীন আমেরিকার জনপ্রিয় নেতা (পরবর্তীতে অন্যতম সফল প্রেসিডেন্ট) আব্রাহাম লিঙ্কন দাসদের এই অবস্থান নিয়ে ১৯৬৩ দাসপ্রথাবিরোধনীতি ঘোষণা করেন। ১৭৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের পর দাসত্ব থেকে মুক্তির আন্দোলন আনুষ্ঠানিকভাবে দানা বাঁধতে শুরু করে। দাসত্বের কবল থেকে মুক্ত হয়ে দাসরা তাদের মানবিক অধিকার ফিরে পেতে ১৭৯১ থেকে ১৮০৩ পর্যন্ত হাইতিতে বিদ্রোহ করে। ১৭৯১ সালের ২২ আগস্ট দাসদের আন্দোলন দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে এবং দাসকর্তৃক এক হাজার ফরাসি প্রভূ হত্যা করা হয়। মূহুর্তেই দাসদের এ আন্দোলন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক দাস বানিজ্য স্মরণ ও রদ দিবস পালনের ঘোষণা দিয়ে ইউনেস্কো সারা বিশ্বে বিশেষ এই বিষয়টি নিয়ে স্মৃতিচারণের সুযোগ করে দেয়। দিবসটি সর্বপ্রথম উদযাপন করা হয় হাইতিতে, ১৯৯৮ সালে। তারপরের বছর এটি সেনেগালে আনুষ্ঠানিকভাবে যাপন করা হয়। এখন এটি একটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে সারা বিশ্বে পালন করা হয়। আন্তর্জাতিক দাস বাণিজ্য স্মরণ ও রদ দিবসে যেসব মানুষ এই ঘৃণ্য দাস ব্যবসা ও দাসত্ব থেকে পৃথিবীকে মুক্ত করতে শ্রম দিয়েছেন তাদেরকে স্মরণ করতে পারি।
Leave a Reply