হৃদয় এস এম শাহ্-আলম মাধবপুর প্রতিনিধিঃ
ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই মহাসড়কে বাস-ট্রাক-লরি-কাভার্ড ভ্যানের ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকাই যেন তাদের প্রতিদিনের ডিউটি। মহাসড়কের দু’পাশে গড়ে ওঠা শিল্প কারখানার গাড়িতেই দখল হয়ে যাচ্ছে সড়কের একাংশ। এছাড়া, মহাসড়কেই চলে পণ্য ও কাঁচামাল লোড-আনলোডের কাজ। তাতে করে রাস্তা পার হতে গেলেই দূর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় পথচারীদের।
ঢাকা সিলেট মহাসড়কের শিল্প নগরী নামে পরিচিত হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার বাঘাসুরা ইউনিয়নের দরগা গেইটে হাইওয়ে রাস্তার দু’পাশে অবৈধ গাড়ি পার্কিং করে রেখেছে স্টার সিরামিকস এর কর্তৃপক্ষ। আর এসব গাড়ি রাস্তার দুই পাশে থাকায় জনগণের চরম দুর্ভোগে পোহাতে হচ্ছে দিনের পর দিন। তবে স্টার সিরামিকস কতৃপক্ষ বলছে রাস্তায় গাড়ি রাখার অনুমতি না থাকলেও সরকারকে নিয়মিত টেক্স দেয়া হচ্ছে।
যাত্রী ও চালকদের অভিযোগ, শিল্প কারখানাগুলোর পণ্য ও কাঁচামাল পরিবহনকারী গাড়ির পার্কিংয়ে দখল হয়ে থাকে সড়কের একপাশ। শুধু তাই নয়, কারখানাগুলোর কাঁচামাল ও পণ্য লোড-আনলোডের কাজও অনেক সময় চলে সড়কের ওপরেই। নিয়ম না থাকলেও থানা ও হাইওয়ে পুলিশকে টাকা দিয়ে ‘ম্যানেজ করে এভাবে পার্কিং ও লোড-আনলোডের কাজ কারখানাগুলো চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কারখানার গাড়িতে সড়ক দখলের বিষয়টি মেনে নিলেও ‘ম্যানেজ হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছে পুলিশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মাধবপুর থেকে অলিপুর পর্যন্ত সড়কের দু’পাশের বেশিরভাগ অংশই দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন কারখানার কন্টেইনার মুভার, লরি, কাভার্ড ভ্যান ও পণ্যবাহী ট্রাক। এছাড়া এসব কারখানার পণ্য ও কাঁচামাল আনা-নেওয়ার জন্য গাড়িগুলো কারখানায় ঢোকা ও বের হওয়ার সময়ও সড়কের বড় একটি অংশ দখল হয়ে যায়। এসময় রাস্তার উভয়দিকে যানচলাচল কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তৈরি হয় দীর্ঘ যানজট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের কারণে যাত্রীদের ভোগান্তিতেও পড়তে হয়। রাস্তাপারারে পড়তে হয় দুর্ঘটনার কবলে।
স্থানীয়রা জানান কিছুদিন পর পরই এখানে গাড়ি দুর্ঘটনা করে। আর এতে মানুষ মারা যায় কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেই। হাইওয়ে থানা পুলিশ প্রতিদিন টহল দিলেও তারা কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ডাঃ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান তালুকদার সজল জানান, ‘শিল্প কারখানাগুলো নিজস্ব ট্রাক স্ট্যান্ড নেই। তাদের অধিকাংশ গাড়ি সড়কে ডাম্পিং করে রাখা হয়। এ কারণেই মূলত মহাসড়কের এই অংশে যানজটের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া আমাদের যাতায়াত করতেও সমস্যা হয়।
পার্কিং করে রাখা ট্রাক ড্রাইভার সালাম মিয়া বলেন, স্টার সিরামিকসের কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে বলেছেন আমরা যেন রাস্তার দু’পাশে গাড়ি পার্কিং করি। আমরা কোম্পানীর মাল আনা নেওয়া করি। তাদের কোন পার্কিং স্থান নেই। তাই আমরা রাস্তাতেই পার্কিং করি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাক ড্রাইভার জানান, কোম্পানীর লোকেরা বলেছে এখানে (রাস্তায়) গাড়ি পার্কিং করলে কোন সমস্যা হবে না। তারা হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশকে মাসোয়ারা দিয়ে ম্যানেজ করে রেখেছে। কেউ কিছু বলবে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার পরিবহন সেক্টরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সড়কে পার্কিং করার জন্য থানা ও হাইওয়ে পুলিশকে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেওয়া হয়। টাকা না দিলে পুলিশ অভিযান চালায়, ঝামেলা করে।’
স্টার সিরামিকস কোম্পানীর এসিস্ট্যান্ট ম্যানাজার (এডমিন) পল্লব চক্রবর্তী জানান, আমরা রাস্তার পাশে ইট সলিং করেছি গাড়ি রাখার জন্য এবং সরকারকে নিয়মিত ট্যাক্স দিচ্ছি। এজন্যই কোম্পানির গাড়ি সব সময় রাস্তায় থাকে। এতে মানুষ চলাচলের কোন সমস্যা হয় না।
জানতে চাইলে হাইওয়ে থানার ওসি মাইনুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, আমরা প্রতিদিন সেইখানে টুল বসিয়া জরিমানা এবং মামলা দিচ্ছি। তারা যেন রাস্তার পাশে ট্রাক না রাখে এ ব্যাপারে নিষেধ করেছি।
এসব প্রতিষ্ঠানের গাড়িগুলো সড়ক থেকে সরানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবী জানান এলাকাবাসী।
Leave a Reply