রিয়াজ রহমান::
কেন্দ্রীয় যুগ্ন মহাসচিব
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটি
পবিত্র মাহে রমজান আমাদের একেবারেই সন্নিকটে। প্রতি বছ্রই পবিত্র রমজান আসার আগেই দেশের ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দিয়ে জনজীবন অসহনীয় করে থাকেন। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন,যে ভাবে প্রতিদিন পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা কোনোভাবেই আমাদের কাম্য নয়।
পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে প্রতি বছর অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের আবির্ভাব ঘটে। এইসব ব্যবসায়িরা বিভিন্ন পণ্য মজুদ ও বিক্রি করে থাকেন। রোজার আগেই নিত্যপণ্যের পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে দুধ, ডিম ও মাংসের দাম বেড়েছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মুনাফাখোর, মজুতদারি, সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, নকল, ভেজাল ও মানহীন পণ্যের দৌরাত্ম্যের কারণে নাগরিক জীবন অতিষ্ঠ হয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-জীবিকার অধিকার মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন।একশ্রেণীর নীতি-আদর্শহীন,অতি মুনাফালোভী, অসাধু ব্যবসায়ীর দিনে দিনে কোটিপতি হওয়ার বাসনায়, তাদের ইচ্ছামতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ সংকট সৃষ্টি করে ও দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় অচল করে দিচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের জন্য জীবন-জীবিকা নির্বাহ করা দুরূহ হয়ে পড়ছে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে দাম বাড়ালেও ওই পণ্যের আন্তর্জাতিক মূল্য কমলেও তারা আর কমান না। ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম ইচ্ছামতো বাড়ান, কমান, সরবরাহসহ বাজার নিয়ন্ত্রণ করে জনগণকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা নিজেদের পকেটস্থ করেন। যার কারণে কাঁচাবাজার, ফলমুলের ব্যবসায়ী, ফার্মেসিসহ সবাই নিজেরাই তাদের ইচ্ছামতো পণ্য ও সেবার মূল্য নির্ধারণ করছেন। পাইকারি ও খুচরা বাজারের মাঝে সমন্বয় করলে, মজুতদারি ও একচেটিয়া আমদানির দৌরাত্ম্য কমাতে পারলে দ্রব্যমূল্য অনেকাংশে কমানো যেতো। পবিত্র রমজান, রেখে একশ্রেণির মুজতদারি, সিন্ডিকেট চক্র প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের নাকের ডগায় তাদের বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে চিনি, ছোলা, পিয়াজ মসলা ও সয়াবিন সংকট তৈরি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। চক্রটি চাল সংকট করে বিপুল অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এসব মজুতদারি, অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটকারীদের সঙ্গে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু লোকের অবৈধ আঁতাতের কারণে জনগণের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া সম্ভব হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রী সহজলভ্য ও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখা সরকারের দায়িত্ব এবং ভোক্তা শ্রেণির অধিকার। কিন্তু আমাদের দেশের বাজার ব্যবস্থাপনা মজুতদার লুটেরাদের হাতে কুক্ষিগত। বিশেষত রমজান ও ধর্মীয় উৎসবগুলোতে বাজার ব্যবস্থাপনায় শোচনীয় অবস্থা বিরাজ করে। তখন কিছু সংখ্যক ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্য মজুত করে রাখে। এতে অস্বাভাবিকভাবে পণ্যের মূল্য হু হু করে বাড়তে থাকে। ভোক্তা শ্রেণী প্রয়োজনের তাগিতে চড়ামূল্যে পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে বাধ্য হয়। ফলে এ সুযোগে অতি মুনাফাখোর একদল অসাধু ব্যবসায়ী সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলে। আর সাধারণ মানুষ চড়া মূল্যে পণ্য ক্রয় করে নিঃস্ব থেকে আরও নিঃস্বতর হয়। তখন সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মজুতদারি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণের নানা কথা বলে থাকেন কিন্তু বাস্তবে এ সমস্যার প্রতিকার সামান্যই পরিলক্ষিত হয়। পবিত্র রমজান মাস মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি বিশেষ নিয়ামত। এটি সংযম ও নাজাতের মাস, পাপমুক্তির মাস হলেও এসব মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যের কারণে জনজীবন হয়ে উঠে অসহনীয় ও যন্ত্রণাদায়ক। আর রমজান নাজাতের মাস হলেও আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির কারনে তা আতঙ্কের মাসে পরিণত হয়েছে।। মজুতদারী সর্ম্পকে হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘মজুতদার খুব নিকৃষ্টতম ব্যক্তি। যদি জিনিসপত্রের দাম হ্রাস পায়, তবে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে, আর দাম বেড়ে গেলে আনন্দিত হয়।’ (মেশকাত)।
সরকারের যথাযথ মনিটরিংয়ের দুর্বলতার সুযোগে আর দ্রব্যমূল্য মনিটরিংয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারের কর্তাব্যক্তিদের খামখেয়ালিপনার কারণে কিছু মুনাফাখোর, মজুতদারি, সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অস্থিতিশীল হয়। বাজারে সবকিছু থরে থরে সাজানো দ্রব্যের কমতি নেই। লাগামহীন মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা নেই। এজন্য ভোক্তা আইন-আন্দোলন ইত্যাদি থাকলেও বাজার মনিটরিং করার দায়িত্বে নিয়োজিত কাউকে ঈমানী তাগিদে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়না।
পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায় রাখার জন্য সরকার প্রধান থেকে শুরু করে সব মহল ব্যবসায়ীদের বার বার অনুরোধ করার পরও তাদের সেই অনুরোধ কাজে আসে না।
পরিশেষে প্রশাসনের নিকট বিনীত অনুরোধ পবিত্র রমজানে সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে নয় নিজ ঈমানী তাগিদে দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করে দ্রব্য মূল্য , ভেজাল ও মানহীন দ্রব্য বিক্রয় নিয়ন্ত্রন করা।
Leave a Reply