সিলেট প্রতিনিধি :: আগেই আভাস পাওয়া গিয়েছিলো, সিলেট সিটি করপোরেশনের আজকের মাসিক সভায় ‘নগর চত্বরকে’ ‘কামরান চত্বর’ করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। হলোও তাই। পরিষদের সভায় নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, গত রবিবার সন্ধ্যারাতে উদ্বোধন হওয়া ‘নগর চত্বরটি’ ‘কামরান চত্বর’ হিসেবেই ঘোষণা করা হবে। আজ মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) বেলা সোয়া ২টায় সভা শেষ হওয়ার পরই বিষয়টি সিলেটভিউকে নিশ্চিত করেছেন সিসিক’র প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান। সিলেট সিটি করপোরেশন তথা নগর ভবনের সামনের পয়েন্টকে গত রোববার সন্ধ্যারাতে ‘নগর চত্বর’ হিসেবে উদ্বোধন করেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। যে চত্বরটি এতোদিন ‘সিটি পয়েন্ট’ নামে পরিচিত ছিলো। তবে পরদিন (গতকাল সোমবার) সেই চত্বরের সাইনবোর্ড খুলে ‘কামরান চত্বর’ নামের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন ক্ষুব্ধ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল দুপুরে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী মিছিল সহকারে এসে ‘নগর চত্বর’ সাইনবোর্ড খুলে ‘জনতার কামরান চত্বর’ লেখা নতুন সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। এসময় বক্তৃতাকালে মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ বলেন, আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) সিটি করপোরেশনের মাসিক সভা আছে। এই সভায় আমরা এই চত্বরের নাম চূড়ান্তভাবে কামরান চত্বর করার প্রস্তাব রাখবো। এদিকে আজ মঙ্গলবার সিলেট সিটি করপোরেশনের মাসিক সভার শুরুতেই এই চত্বর নিয়ে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সার্বিক বিষয় তুলে ধরেন এবং দ্রুত এটি কামরান চত্বর হিসেবে ঘোষণার দাবি জানান। এ দাবির সঙ্গে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ পরিষদের কেউই দ্বিমত পোষণ করেননি। তাই নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, বর্তমান নগর চত্বরই হবে কামরান চত্বর। এ বিষয়ে সিসিক’র প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান সিলেটভিউ বলেন, দীর্ঘ আলোচনা এবং পরিষদের সবার সম্মতিক্রমে নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে- নগর ভবনের সামনের চত্বরটিই কামরান চত্বর করা হবে। এ বিষয়ে দ্রুত ফাইল রেডি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে, অনুমোদন পেলেই এটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘কামরান চত্বর’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে। এর আগে গত রোববার সন্ধ্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের সৌন্দর্য্যবর্ধণ প্রকল্পের আওতায় নবনির্মিত নগর চত্বর অবকাঠামো উদ্বোধন করেন সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এই স্থাপনা নির্মাণে অর্থায়ন করেছে ইউনাইডেট কমার্সিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে ডিজাইন আর্টিস্টি। উল্লেখ্য, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান গত ১৫ জুন মারা যান। করোনাক্রান্ত হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। পরদিন সোমবার তার মরদেহ সিলেটে এনে মানিক পীর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নির্বাহী সদস্য পদে আমৃত্যু দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আর সিলেট সিটি করপোরেশনের ইতিহাসে প্রথম নির্বাচনে তিনি মেয়র হয়েছিলেন। পরের দফায়ও একই পদে কারাগার থেকে নির্বাচিত হন কামরান। নিজের জীবনের প্রায় দুই ভাগ সময়ই (৪১ বছর) তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাটিয়েছেন। ১৯৫৩ সালে জন্ম নেয়া বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মাত্র ১৯ বছর বয়সে ১৯৭২ সালে তৎকালীন সিলেট পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন। এরপর কমিশনার থেকে হন পৌরসভার চেয়ারম্যান। পৌর চেয়ারম্যান থেকে দু’বারের সিটি মেয়রও ছিলেন তিনি। সিলেটে ব্যাপক জনপ্রিয় কামরানের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতি ধরে রাখার বিষয়ে জোরালো দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও সেই দাবিতে শামিল হন। সবার দাবির সাথে দ্বিমত করেননি বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও। কামরানের স্মৃতি ধরে রাখতে ‘কিছু একটা করা হবে’ বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে দল-মত নির্বিশেষ সকলের প্রত্যাশা ছিলো- সিটি পয়েন্টকে উদ্বোধনের সময় ‘কামরান চত্বর’ হিসেবে ঘোষণা দিবেন আরিফ, কিন্তু গত রোববার সে আশার গুড়ে যেন বালি ঢেলে দেন বিএনপি নেতা আরিফুল হক চৌধুরী।
অবশেষে গত দুই দিনে অনেক জল ঘোলা করে আজ পরিষদের সভায় নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়, এটিই হচ্ছে কামরান চত্বর। এ বিষয়ে আরিফুল হক চৌধুরীও আজ দ্বিমত পোষণ করেননি।
Leave a Reply