মোঃ মুকিম উদ্দিন স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জে বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের লক্ষে ভাষা সৈনিক মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর, স্বাধীন বাংলার প্রথম পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত জাতীয় নেতা মরহুম আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদকে একমাত্র স্বাধীনতা পুরস্কার ব্যতীত রাষ্ট্রীয়ভাবে এখন পর্যন্ত কোন সম্মান জানানো হয়নি। তিনির স্মৃতি রক্ষায় কোন সরকারী স্থাপনা বা প্রতিষ্টানে নামকরন করা হয়নি।
যদিও মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলীসহ অসংখ্য প্রয়াত জাতীয় নেতৃবৃন্দের নামে অনেক সরকারী স্থাপনা ও প্রতিষ্টানে নামকরন করে তাদের স্মৃতির প্রতি রাষ্ট্র সম্মান জানিয়েছেন। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান জেনারেল আতাউল গনি ওসমানীর নামে অসংখ্য সরকারী স্থাপনা ও প্রতিষ্টানে নামকরন করা হয়েছে।
প্রয়াত জাতীয় নেতা মরহুম আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ ত্রিকালদর্শী দেশপ্রমিক রাজনীতিবিদ হিসেবে সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যাক্তিত্ব ছিলেন। রাজনীতির কঠিন সময়ে মেধা, বিচক্ষনতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় বারংবার দিয়েছেন।১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোশতাকের পরিবর্তে ভ্রম্যমান রাষ্ট্রদূত হিসেবে সারা বিশ্ব চষে বেড়িয়ে বিশ্ব জনমত আদায় করতে সমর্থ হয়েছিলেন। দেশ স্বাধীনের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে খুব কম সময়ে বেশীরভাগ দেশের স্বীকৃতি আদায় করে কুটনৈতিক সফলতা অর্জন করেছেন।১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আব্দুস সামাদ আজাদ খুনিদের সাথে হাত মিলাননি। কারগারকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন। ৩রা নভেম্বর কারাগারের ভিতরে খুনিরা ৪ জাতীয় নেতাকে হত্যা করলেও সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেচে গিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন কারাবরণের পর বেরিয়ে আসেন। পরবর্তীতে তৎকালীন সামরিক শাসক মেজর জেনারেল জিয়ার শাসনামলে আওয়ামীলীগের ঐক্যে ফাটল দেখা দিলে তিনি সৈয়দা জহুরা তাজ উদ্দিনকে সাথে নিয়ে আওয়ামিলীগকে আটকে রাখেন ও সংগঠিত করেন। ১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত কাউন্সিল অধিবেশনে আব্দুস সামাদ আজাদ দলের ঐক্যের প্রতীক হিসেবে সবাপতি পদে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করলে কাউন্সিলারদের কন্ঠ ভোটে শেখ হাসিনা দলের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। কাউন্সিলের পরে আব্দুস সামাদ আজাদ আওয়ামীলীগের প্রতিনিধি হিসেবে ভারত গিয়ে নির্বাসনে থাকা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে দেশে নিয়ে আসেন।
স্বৈরশাসক এরশাদের আমলে আব্দুস সামাদ আজাদ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সহকর্মী হিসেবে রাজপথে সংগ্রাম করেন।স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে এরশাদ তখন আব্দুস সামাদ আজাদকে তার সরকারের প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়ার প্রস্তাব দেন। আব্দুস সামাদ আজাদ ঘৃনাভরে স্বৈরাচার এরশাদের প্রস্তাবকে প্রত্যাখান করেন। এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৮ দলীয় জোট ও আওয়ামিলীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোটের মধ্যে লিয়াজো করার সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন আব্দুস সামাদ আজাদ। স্বৈরাচার এরশাদ আব্দুস সামাদ আজাদকে নিজ দলে না নিতে পারায় প্রবীন আওয়ামীলীগ নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরীকে তার দলে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন।
১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের পতনেরপরে ১৯৯১ সালে সংসদে বেসরকারী বিল হিসেবে তৎকালীন বিরোধী দলীয় উপনেতা আব্দুস সামাদ আজাদ সংসদীয় গণতন্ত্রের সংবিধান সংশোধনী বিল সংসদে উত্তাপন করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে সংসদীয় গঠন্তন্ত্রের বিল পাস হয়।
খালেদা জিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রিরোধী দলীয় ১১ সদস্য বিশিষ্ট লিয়াজো কমিটিতে আব্দুস সামাদ আজাদ সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।সর্বশেষে জনতার মঞ্চ গঠনের মধ্যদিয়ে বিএনপি সরকারের পতন তরান্বিত হয়।
১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে। আব্দুস সামাদ আজাদকে তার কর্মদক্ষতার ফলে পুনরায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে অলংকৃত করা হয়। ভারতের সাথে ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গা পানি চুক্তি ও ভারতের সর্মথনে পার্বত্য চট্রগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরে আব্দুস সামাদ আজাদ অগ্রনী ভূমিকা পালন করেন।
৬৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আব্দুস সামাদ আজাদ শুধু দেশ ও জাতির জন্যে কাজ করে গেছেন। রাষ্ট্র এবং দেশ ও জাতি এবার আব্দুস সামাদ আজাদকে কিছু দেয়ার পালা এসেছে।সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে এটা সুনামগঞ্জ তথা দেশ জাতির আনন্দের ও গৌরবের বিষয়। আমরা সুনামগঞ্জ তথা জগন্নাথপুরবাসী বঙ্গবন্ধু কন্যা ও উন্নয়নের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট জোর দাবী জানাচ্ছি সুনামগঞ্জে যে বিশ্ববিদ্যালয়টি হচ্ছে সেটি “আব্দুস সামাদ আজাদ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সুনামগঞ্জ” নামকরন করা হউক।
সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দদের অনুরোধ করছি আপনারা যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারন নিয়ে সকল সংসদ সদস্যগনসহ ঐক্যবদ্ধ হয়ে যেভাবে সংসদে ভূমিকা রাখছিলেন সেই রকম আব্দুস সামাদ আজাদের নামে বিশ্ববিদ্যালয়টি নামকরনের জন্য জেলা আওয়ামীলীগের একটি রেজুলেশন করে৷ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে পৌছিয়ে দেয়ার আহ্বান করছি।এবল সুনামগঞ্জের সকল সংসদ সদস্যদের কাছে আমরা বিনীত ভাবে অনুরোধ করছি আপনারা এই বিষয়টি নিয়ে সংসদে কথা বলার জন্য। এতেকরে রাষ্ট্র, সরকার, দল তথা সুনামগঞ্জবাসীর ঋন পরিশোধ হবে। এতেকরে আপনাদের নাম ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমাদের বিশ্বাস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সুনামগঞ্জ বাসীর এই দাবী থেকে নিরাশ করবেন না।
Leave a Reply