মুহিবুর রেজা টুনু,সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::
সুনামগঞ্জের ছাতকে আলোচিত রাব্বি হত্যা মামলার প্রধান আসামী তারেকের বয়স এজাহারে ২৪ বছর থাকলেও বয়স্ক এবং অসুস্থ দেখিয়ে সুচিকিৎসার জন্য আদালত থেকে ২০২০ সালের গত ২৩ ডিসেম্বর সুনামগঞ্জ ভ্যাকেশনাল কোর্ট থেকে তিনি জামিন লাভ করেন। এর আগে গত ১৩ আগষ্ট ২০২০ ইং তারিখে প্রধান আসামী তারেকের বয়স বেশি ও অসুস্থতা দেখিয়ে হাইকোর্টে মিস কেইস নং-৫২৯৫১৫/২০২০ জামিন আবেদন করেন। হাইকোর্ট তার জামিন নামঞ্জুর করেন। অভিযোগ উঠেছে, রাব্বি হত্যা মামলার প্রধান আসামী তারেকসহ অন্যান্য আসামীরা জামিনে মুক্ত হয়ে নিহত রাব্বির মা ও মামলার বাদী রুপিয়া বেগমকে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য প্রকাশ্যে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে আসছেন।
জানা যায়, গত ২০১৯ ইং তারিখের ২৩ জুলাই আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টায় ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরীর ৪নং এলাকার বাজারস্থ শফিক মিয়ার দোকানের সামনে পূর্ববিরোধের জেরে কিরিচ, ডেগার ও ছুরিকাঘাত করে মেহেদী হাসান রাব্বিকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। রাব্বি পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পূর্ব নোয়ারাই গ্রামের মৃত. আলমগীর হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় ২০১৯ ইং তারিখের ২৬ জুলাই রাব্বির মা ও মৃত. আব্দুল মালিক (বীর মুক্তিযোদ্ধা)’র মেয়ে রুপিয়া বেগম বাদী হয়ে তারেককে প্রধান করে ১৭ জনকে আসামী করে ছাতক থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-২০।
উক্ত মামলায় লিয়াকত আলী, মোক্তার আলী গ্রেফতার হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ হতে লিয়াকত আলী ও সুনামগঞ্জ ভ্যাকেশনাল কোর্ট থেকে মোক্তার আলী জামিনে মুক্ত হন। জামিনে মুক্ত হয়ে প্রায় সময়ই মামলার বাদী রুপিয়া বেগমকে হাইকোর্টে আসা-যাওয়ার পথে মামলা প্রত্যাহারের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে আসছেন। এ ঘটনায় গত ৩১ আগষ্ট ২০২০ ইং তারিখে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় রুপিয়া বেগম একটি করেন। যার জিডি নং- ২১৭৫ । গত ১৮ অক্টোবর ২০২০ ইং তারিখে লিয়াকত আলীর জামিন নামঞ্জুর করেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। কিন্ত নি¤œ আদালতে হাজিরা না দিয়ে সময় কালক্ষেপন করছেন অভিযোগ বাদী পরিবারের।
আবারো গত ২০ জানুয়ারী ২০২১ ইং তারিখে সন্ধ্যার সময় রুপিয়া বেগম তার ১০ বছরের মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারে যাওয়ার পথে প্রধান আসামী তারেক, লিয়াকত আলী, মোক্তার আলী ও অপু মিয়া তাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রস্তাব করেন। এতে রুপিয়া বেগম সম্মত না হলে খুন করে লাশ গুম করার ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করা হয়। এ ঘটনায়ও তিনি নিজের ও পরিবারের নিরাপত্বা চেয়ে গত ২৪ জানুয়ারী ২০২১ ইং তারিখে ছাতক থানায় একটি সাধারন ডায়েরী নং-১১০০ এন্ট্রি করেন। অন্যদিকে রাব্বি হত্যা মামলার ধার্য্য তারিখে গত ২১ জানুয়ারী ২০২১ ইং সুনামগঞ্জ কোর্টে যান রুপিয়া বেগম। সেখানেও রুপিয়া বেগমকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য প্রস্তাব করেন প্রধান আসামী তারেকসহ, লিয়াকত আলী, মোক্তার আলী ও অপু মিয়া। প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রুপিয়া বেগমকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করা হয়। এ ঘটনায়ও রুপিয়া বেগম সুনামগঞ্জ মডেল থানায় গত ২১ জানুয়ারী ২০২১ ইং তারিখে একটি সাধারন ডায়েরী নং ১০৮৯ এন্ট্রি করেন।
এর পর গত ৭ ফেব্রæয়ারী মামলার কাজে সুনামগঞ্জে যান রুপিয়া বেগম। পরদিন অথ্যাৎ ৮ ফেব্রæয়ারী আদালতে রাব্বি হত্যা মামলার তারিখ ধার্য থাকায় তিনি বাড়ীতে না ফিরে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ব্রাম্মনগাঁও গ্রামের আব্দুল সালামের স্ত্রী ধর্মীয় আত্মীয় সায়েরা বেগমের বাড়ীতে যান। রুপিয়া বেগমকে সায়েরা বেগমের মেয়ে শেলী বেগমের বাড়ীতে রাত্রে ঘুমানোর জন্য দেওয়া হয়। কিন্ত ওই রাতেই রুপিয়া বেগমের আইফোনটি চুরি হয়ে যায়। চুরি যাওয়া আইফোনে নিহত রাব্বির জবানবন্ধি রেকর্ড ছিল। এতে তিনি অসুস্থ্য হলে সিলেট এমএজি ওসামনি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তী ও চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে ফিরে এ ঘটনায়ও রুপিয়া বেগম বাদী হয়ে গত ২৪ ফেব্রæয়ারী ২০২১ ইং তারিখে সুনামগঞ্জ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
অন্যদিকে রাব্বি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ফাঁসির দাবিতে সুনামগঞ্জ সদর ও ছাতকে একাধিকবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করে আসছেন নিহত রাব্বির মা ও তার পরিবারের লোকজন।
এ বিষয়ে নিহত রাব্বির মা ও মামলার বাদী রুপিয়া বেগম বলেন, ন্যায় বিচার চাইতে গিয়ে আমি অসহায় হয়ে পড়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্ট সবার কাছে আমি বীর মুক্তিযুদ্ধার মেয়ে ও একজন মা হিসাবে একটাই দাবি রাব্বি হত্যাকরীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ফাঁসি চাই।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জসদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শহিদুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে দেখতে হবে। সুনামগঞ্জ সদর থানার থানার এসআই কবির মোবাইল চুরির ঘটনায় অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মোবাইল চুরি নাকি হারানো গিয়েছে এ বিষয়টি তদন্ত চলমান রয়েছে।
এ ব্যাপারে রাব্বি হত্যা মামলার আইনজীবি অ্যাডভোকেট বজলুল মজিদ চৌধুরী খসরু সম্প্রতি মৃত্যুবরন করার কারনে ও পরবর্তীতে নতুন করে অন্য কোন আইনজীবি নিযুক্ত না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বিপিএম বলেন, এ মামলার চার্জসিট প্রদান করা হয়েছে এবং মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। l
Leave a Reply