মোঃ মুকিম উদ্দিন স্টাফ রিপোর্টার::
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কলকলিয়া ইউনিয়নের কামারখাল উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার (মেডিকেল অফিসার) না থাকায় প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এই এলাকার গরীব, অসহায় ও দুঃস্থ পরিবারের লোকজন।
আজ ১৭ জুলাই শনিবার কামারখাল উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, এখানে পুরুষের তুলনায় মহিলা ও শিশু রোগীর ভির বেশী। তবে সেখানে রোগীরা জমায়েত হয়ে বসে আছেন ডাক্তারের অপেক্ষায় অতচ তারা জানেনিই না এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোন মেডিকেল অফিসার নেই। যদিও একজন মেডিকেল অফিসার এখানে দায়িত্বরত ছিলেন তাকেও এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে প্রায় দুই তিন মাস পূর্বে বদলী করে নিয়ে যাওয়া হয় সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে। এখানে নতুন কোন মেডিকেল অফিসার নিয়োগ না দিয়েই তাকে বদলী করায় এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ডাক্তার শূন্য হয়ে পরায় চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত তিনটি উপজেলার লোকজন।
জানাযায়, মোগল সম্রাটের আমলে সর্বপ্রথম জগন্নাথপুর উপজেলায় তিনটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপিত হলে তম্মধ্যে কামারখাল উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র বাবু রাজ গোবিন চৌধুরীর বংশধর বাবু রসময় চৌধুরী তত্বাবধানে ১৯২৬ সালে এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি প্রতিষ্টিত হয়। প্রতিষ্টাকাল থেকে এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি একের পর এক সমস্যায় জরজড়িত। কামারখাল উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি ভাটি অঞ্চলের গরীব, দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের একমাত্র চিকিৎসা সেবা পাওয়ার আশ্রয় কেন্দ্র। এছাড়াও এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রায়দিনই তালা ঝুলে থাকতে দেখা যায়। বৈশ্বিক মহামারী করোনায় লকডাউন চলাকালীন সময়ে এই এলাকার গরীব অসহায় মানুষের সামান্য স্বর্দি জ্বর হলে ঐ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিই তাদের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা তাদের পক্ষে উপজেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব নয়।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা এক ব্যক্তি বলেন, আমি আজ দুইদিন যাবত এই হাসপাতালে আসছি চিকিৎসার জন্য এসে দেখি ডাক্তার নেই হাসপাতালে তালা ঝুলছে অপেক্ষা করে নিরুপায় হয়ে বাড়ি চলে যাই। তিনি আরও বলেন, লকডাউনের কারনে রুজি রুজগার নাই তাই অন্য কোথাও চিকিৎসা করাতে পারছিনা। এই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যদি ডাক্তার থাকতো তাহলে আমাদের এই দুর্ভোগ পুহাতে হতনা।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ফাতেহা বেগম বলেন, আমরা আজ সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত লাইনে দাড়িয়ে আছি এখন পর্যন্ত ডাক্তার দেখাইতে পারিনাই আমার আগে যারা ছিল তাহারাও এখন পর্যন্ত লাইনে দাড়িয়ে আছে। এমনিভাবে লাইনে দাড়িয়ে থাকলে সুস্থ্য মানুষ অসুস্থ্য হয়ে যাবে। তাই রোগীদের অবস্থা বিবেচনা করে এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আরেকজন ডাক্তার নিয়োগ দেওয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট দাবী জানাই।
এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দায়িত্বরত সহকারী মেডিকেল অফিসার ডাঃ শহিদুল্লাহ কাউসার বলেন, আমি জগন্নাথপুর উপজেলা সদরসহ আরও দুই জায়গায় দায়িত্বপালন করতে হয় তাই এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সপ্তাহের প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবারে আসতে হয় সপ্তাহের দুইদিন আসলে দেখা যায় এখানে তিনটি উপজেলা দক্ষিন সুনামগঞ্জের পাইকাপন, দিরাই উপজেলার হুসেনপুর, সিকন্দরপুর, ও জগন্নাথপুরের কলকলিয়া ইউনিয়নের কান্দারগাঁও, নোয়াগাঁও, তেলিকোনা, কামারখাল, গলাখাল, শ্রীধরপাশা, জগদীশপুর, কাদিপুর, ও সাদিপুর গ্রামের প্রায় ২ থেকে ২৫০ শত রোগী আসে সেখানে একা আমার পক্ষে এতসব রোগীর চিকিৎসা দেওয়া খুব কষ্টকর হয়ে যায়।
তেলিকোনা গ্রামের হেলাল মিয়া বলেন, সকাল থেকে কষ্ঠকরে লাইনে দাড়িয়ে ডাক্তার দেখালাম ঔষধ বিভাগে এসে দেখাযায় ডাক্তার সাহেব যে ঔষধ লিখে দিয়েছেন সেখানে সেই ঔষধ নাই, যার ফলে রোগীদের ডাক্তার দেখানো আর না দেখানো সমান। আমরা গরীব দিনমজুর লোক করোনাকালী লকডাউন থাকায় কাজ কাম না করতে পারায় আমরা কোন রকম খেয়ে না খেয়ে বেচে আছি। এখন ঔষধ কিনব কি দিয়ে। যদি এই হাসপাতালে ঠিকমত সরকার ঔষধ দিতো তাহলে আমাদের অনেক উপকার হতো।
চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ফাতেমা বেগম বলেন, আমাদের গ্রামাঞ্চলে কোন হাসপাতাল নাই। এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি থাকায় আমরা অনেক উপকার পাইতেছি। যে কোন সময় অসুখ হলে এই হাসপাতালে আইসা চিকিৎসা পাই। কিন্তু আজ প্রায় ২/৩ মাস যাবত এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে মেডিকেল অফিসার না থাকায় আমাদের শিশু সন্তানসহ আমরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। সরকারের কাছে আমাদের দাবী শীঘ্রই এই উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একজন মেডিকেল অফিসার নিয়োগ দিতে।
Leave a Reply