সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ তিনদিনের অভিরাম ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দোয়ারাবাজারের ৭ ইউনিয়নের ৫০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানিতে ভেসে গেছে শতাধিক পুকুরের অন্তত কোটি টাকার মাছ। ঢলের তোড়ে পানিতে তলিয়ে গিয়ে স্থানে স্থানে ফাঁটল ও ভাঙনে উপজেলা সদরের সাথে ৭ ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সুরমা, চেলা, মরা চেলা, খাসিয়ামারা, চিলাই, কালিউরি ও ছাগলচোরাসহ সকল নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সকল হাওর খাল-বিল ইতোমধ্যে ভরে গিয়ে উপজেলঅর সবকটি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পড়েছে। সুরমা ইউপি চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মামুনুর রশীদ জানান, আজবপুর, খৈয়াজুরি, টেংরাটিলা, মহব্বতপুর, বরকত নগর, গিরিশ নগর, ভূজনা, শরীফপুর, নুরপুর, আলীপুর, কাউয়াগড় ও টিলাগাঁওসহ ১৫ গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। সবকটি পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। দোয়ারাবাজার-বগুলা রাস্তায় সংস্কার করা মোকামের ভাঙার পাশে নতুন করে ভাঙন ছাড়াও কাউয়াগড়-ইসলামপুর-মহব্বতপুর কাাঁচা রাস্তায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। মহব্বতপুর বাজারে হাটু সমান পানি উঠেছে। বগুলা ইউপি চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, পাহাড়ি ঢলের তোড়ে ক্যাম্পেরঘাটের পার্শ্বে চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে ক্যাম্পেরঘাট ও ইঁদুকোনাসহ ৮-১০টি গ্রামের আড়াই শতাধিক বাড়িঘরে পানি উঠতে শুরু করায় মাছের পুকুরগুলোও অচিরেই তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। লক্ষীপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিরুল হক বলেন, পানির তীব্রতায় আমার ইউনিয়নের ১৫-২০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। মান্নারগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা আজিজ বলেন, সুরমা তীরবর্তী আমবাড়ি, যুগিরগাঁও ও ধনপুর গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে কোমর সমান পানি, আমবাড়ি মাদ্রাসা রস্তিাটিও ইতিমধ্যে তলিয়ে যাচ্ছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ইউনিয়নের বাকি গ্রামগুলোও তলিয়ে যাবে। নরসিংপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুর উদ্দিন আহমদ বলেন, মন্তাজনগর, নছরনগর, সারপিননগর, বীরেন্দ্রনগর, শামারগাঁও, শ্রীপুর, উত্তর শ্রীপুর, তেরাপুর , রঘারপাড়সহ অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। খামারিদের মাছের পুকুরগুলোও তলিয়ে গিয়েছে। নরসিংপুর-নোয়ারাই রাস্তা, সোনালী চেলা-ফকিরটিলা রাস্তা, নরসিংপুর-বালিউরা-দোয়ারাবাজার রাস্তা তলিয়ে গিয়ে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। দোয়ারাবাজার সদর ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল বারী জানান, ঢলের তোড়ে শুক্রবার বিকালে উপজেলা সদরের দুটি দোকান ধসে সুরমা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। টেবলাই, বড়বন্দ, লামা সানিয়া, নৈনগাঁও, মাঝেরগাঁও ও উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন গ্রামের অধিকাংশ মাছের পুকুর ভেসে যাওয়ায় কয়েক লাখ টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন খামারিরা। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার বগুলা ইউনিয়নস্থ চিলাই নদী পানি ব্যবস্থাপনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক শিব্বির আকন্দ (শাব্বির) মুঠোফোনে জানান, আলমখালী (উত্তর) নামক স্থানে চিলাই নদীর বেঁড়িবাধ ভেঙে গিয়ে তলিয়ে গেছে শতাধিক হেক্টর তোড় আসা আউশ ধান ও আমনের বীজতলা।
Leave a Reply