হিফজুর রহমান তালুকদার জিয়া::
সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে রানীগঞ্জ বাজার ও আশ-পাশের এলাকা। দীর্ঘদিন যাবত কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনের কারনে এই এলাকার প্রাচীন ব্যবসা কেন্দ্র রানীগঞ্জ বাজার ও এর আশপাশের এলাকা ক্রমশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙ্গন রোধ করতে এখন পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে না কোন পদক্ষেপ। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এক পত্রের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবরে রানীগঞ্জ বাজারের ডান তীর সংরক্ষণ প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশের প্রেক্ষিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প তৈরীর কাজ করছে বলে জানাযায়।এলাকাবাসী জানায়, মুুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রানীগঞ্জ বাজারটি কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে ক্রমশ বিলিন হচ্ছে। বাজার ছাড়িয়ে ভাঙ্গন এখন পাশের বাগময়না, রানী নগর, আলমপুর, বালিশ্রী, টেখইয়া গ্রামে হানা দিলে এই সব এলাকার শত শত ঘরবাড়ি, স্কুল, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ১৯৯৬ সালে ঐতিহ্যবাহী এ বাজারটি ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করতে জগন্নাথপুরের কৃতিসন্তান তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদের নির্দেশে পাউবো একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। যে কারণে কিছুটা ভাঙ্গন রোধ হলেও বর্তমানে ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে।রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বাগময়না গ্রামের বাসিন্দা সংবাদকর্মী দুলন মিয়া জানান,রানীগঞ্জ বাজার প্রতিনিয়ত ভাঙ্গছে। ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বিলীন হচ্ছে আমাদের ঘরবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যে কারণে বাজারের মানচিত্র বদলে গেছে। কুশিয়ারা নদীতে বসতবাড়ি বিলীন হয়ে এখন অনেক লোক নিঃস্ব হয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মজলুল হক বলেন,৭১ সালে পাকবাহিনী ঐতিহ্যবাহী রানীগঞ্জ বাজারে এসে বাজারের নীরিহ মুক্তিকামী ব্যবসায়ীদেরকে জড়ো করে কুশিয়ারার তীরে দাঁড় করিয়ে গণহত্যা চালায়। এই গণহত্যার স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহ্যবাহী বাজারটি এখন ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ভৌগোলিক পরিবর্তন এসেছে। ঐতিহ্যবাহী রানীগঞ্জবাজারটি রক্ষা করতে দ্রুত প্রকল্প গ্রহন করা প্রয়োজন । তিনি বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য পরিকল্পনা মন্ত্রী রানীগঞ্জ বাজারটিকে রক্ষা করতে সংসদে পানি সম্পদ মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পানি সম্পদ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী সরেজমিনে কুশিয়ারার ভাঙ্গন দেখে প্রকল্প বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে গেছেন। রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা জগন্নাথপুর উপজেলা জামে মসজিদের খতিব মাওলানা নিজাম উদ্দিন জালালী বলেন, ‘কুশিয়ারার ভাঙ্গন থেকে রানীগঞ্জ বাজারটি রক্ষা করা না হলেও মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার স্মৃতিস্তম্ভ, রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়ও এক সময় বিলীন হয়ে যাবে। তাই দ্রুত রানীগঞ্জ বাজার ভাঙ্গনরোধে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। পানি উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সামসুদৌহা জানান রানীগঞ্জ ইউনিয়নের বাগময়না ও আশারকান্দি ইউনিয়নের বড়ফেচি বাজার ও ভাঙ্গাবাড়ী এলাকায় কুশিয়ারা নদী ভাঙ্গনে কবল থেকে রক্ষা করার আমরা প্রকল্প তৈরীর কাজ করছি। ভাঙনের ভয়াবহতা এখানকার মানুষের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই। এমন অসহনীয় পরিস্থিতিতে লক্ষাধিক মানুষ বিপর্যস্ততার মধ্য দিয়ে জীবন-যাপন করছেন। বছরের পর বছর তীব্র ভাঙনে প্রতিদিনই বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি, হাট-বাজার, ফসলি জমিসহ বহু স্থাপনা। ভয়াবহ ভাঙন পরিস্থিতিতে বাড়ি-ঘর সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। এই এলাকার অসহায় মানুষ ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনে পানি সম্পদ মন্ত্রী মহোদয়ের নিকট দাবী জানান।
Leave a Reply