রিয়াজ রহমান : সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় রানীগঞ্জ গণহত্যা দিবস উদযাপন উপলক্ষে ১ সেপ্টেম্বর রানীগঞ্জ শহীদ গাজী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শহীদদের স্বরণে খতমে কোরআন, মিলাদ মাহফিল ও শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাজী আরজু মিয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রানীগঞ্জ আলিম মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মুফতি কাজী নজরুল ইসলাম নিজামী, বিশেষ অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন রানীগঞ্জ জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা শেখ আব্বাছ আলী, অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাওলানা আব্দুল কাদির, আব্দুল মালিক মাষ্টার, আবুল কাশেম আকমল, আল আমিন ইসলাম ও ইসলাম উদ্দীন প্রমুখ। সভা শেষে একাত্তরের সকল শহীদ ও গাজীদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও শিরনী বিতরণ করা হয়। উল্লেখ্য ১৯৭১ সালে আজকের এই দিনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ঐতিহ্যবাহী নৌ বন্দর হিসেবে খ্যাত কুশিয়ারা নদীর তীরে অবস্থিত রানীগঞ্জ বাজারে গণহত্যা চালায়। পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় পুরো রানীগঞ্জ বাজার। ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে রানীগঞ্জের সকল ব্যবসায়ী, বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাজারের একটি দোকানে জমায়েত করে। জড়ো করার পর কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই সকলকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। পরে এদের নিয়ে যাওয়া হয় কুশিয়ারা নদীর তীরে। সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পেছন দিক থেকে গুলি করে রক্তে রঞ্জিত করে দেয় কুশিয়ারা নদীকে। ইতিহাসের বর্বর এই নারকীয় তান্ডবে প্রায় দুই শতাধিক লোক শহিদ হলেও হত্যাযজ্ঞের পর ৩৪ জনের নাম পরিচয় পাওয়া যায়।অন্যদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। নিহতদের লাশ কুশিয়ারা নদীতে ফেলে দেওয়ায় অনেকের লাশও খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্বরোচিত এ হত্যাকান্ড এখনো কাঁদায় রানীগঞ্জবাসীকে। রানীগঞ্জ গণহত্যা দিবসে প্রশাসনের শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয়।স্বাধীনতার ৫০ বছরেও রানীগঞ্জে গনহত্যায় শহীদদের স্মরণে কোন স্মৃতি পরিষদ গঠন করা হয়নি। ব্যাক্তি উদ্যোগে শহিদ গাজী ফাউন্ডেশন নামে একটি সামাজিক সংগঠন ২০০৩ সাল থেকে প্রতি বছর রানীগঞ্জ গনহত্যা দিবসে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে আসছে। শহীদ গাজী পাঠাগারের সভাপতি আবুল কাশেম আকমল জানান, এ বছরও দিবসটি পালনে দুপুর ১২টায় রানীগঞ্জ শহীদ গাজী পাঠাগারে শোক সভা, রানীগঞ্জ মাদ্রাসা জামে মসজিদে বাদ জোহর খতমে কোরআন ও দোয়া মাহফিল শেষে ২টায় শহীদ আকলু মিয়ার বাসভবনে এতিম ও মিসকিনদের সাথে নিয়ে এক মধ্যাহ্নভোজনের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ৫ সেপ্টেম্বর শহীদ গাজী ফাউন্ডেশন ইউকে’র উদ্যোগে ভার্চুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
Leave a Reply